আমি
কোন লেখক বা সাহিত্যিক হবার জন্য হাতে কলম ধরিনি বা এই বিজ্ঞানের যুগে যেহেতু কলম
দিয়ে লেখার প্রচলন উঠেই গেছে তাই বলা যায় কম্পিউটারের কি বোর্ডে হাত দেইনি। তবে
মনের গোপন কোণে যে এমন একটা
সাধ সুপ্ত নেই সে কথাও জোর দিয়ে বলতে চাই না। নিতান্তই
চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সময় কাটাবার জন্য বিশেষ করে কারো মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার
চেষ্টা বা দলিল, নোট জাল করা বা কাউকে গুম করে মুক্তিপণ আদায় করা
বা ডাহা মিথ্যে সাক্ষী দেয়া কিংবা কারো মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবার চিন্তা কিংবা কি
করে মানুষের খাবারের সাথে ইট পাথরের গুড়ি কিংবা কাপড়ে দেয়ার রঙ কিংবা নর্দমার পানি
বা নিদেনপক্ষে মানুষের খাবার অযোগ্য পদার্থ মেশানোর চিন্তা গুলি মাথায় এসে ভর না
করে আমাকে রাতারাতি কোন বিখ্যাত আধুনিক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী না করে ফেলতে
পারে সেই চেষ্টা করতে চাই।
ফরমালিন
এবং কার্বাইড দিয়ে পচা খাবার তাজা রাখা এবং ফলমূল পাকিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরার
মহান চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্যেই এই কাজে হাত দিয়েছি। আটা ময়দা দিয়ে
এন্টিবায়োটিক বানানো, খড়ি মাটি দিয়ে স্যালাইন বানাবার প্রক্রিয়া শেখার
আগ্রহ যাতে আমার মাথায় চেপে বসতে না পারে সেই অপ চেষ্টা করার জন্যেই এই কাজে রত
থাকার চেষ্টা করি। এগুলি নাকি আধুনিকতা। তা ভাই আমি কিন্তু এত আধুনিক হতে চাই না
সে কালের মানুষ সেকেলে থাকতে পারলেই ভাল। আমার যুগে আমার চাচাত ভাইকে দেখেছি
ঝিটকার হাটে পাঁচ টাকায় একটা আধ মনি খাসি
বিক্রি করে আট আনার রসগোল্লা কিনে এনেছিল তখন একশ টাকায় গরু পাওয়া যেত। আমি
নিজেও আট আনা কেজি গরুর মাংস কিনেছি। যাক সেসব কথা, ওগুলি
বললেতো বিশ্বাস করবেনই না উলটা আমাকে পা কিংবা মাথা গোল মনে করে সন্দেহের চোখে
তাকাবেন তাই কি দরকার সেকালের কাহিনী গাইবার? নিজেই লিখি
নিজেই পড়ি এসব কিছু করি আর সময় গুলা বেশ তর তর করে চলে যায়। ব্যাস আর কি?
আগে
আমরা কলম দিয়েই লিখতাম কিন্তু মেয়েদের দেখতাম ওরা কি সুন্দর করে কি বোর্ড চেপে
চেপে নানা কিছু লিখে ফেলছে। তাই দেখে দেখে ভীষণ লোভ হচ্ছিল ইশ আমিও যদি এমনি করে
লিখতে পারতাম! ওদিকে লজ্জায় কাওকে বলতেও পারছিলাম না আবার শেখার ইচ্ছেটাকেও দমিয়ে
রাখতে পারছিলাম না তাই একদিন নিজের ছোট মেয়েটাকেই বললাম আমাকে একটু এই কি বোর্ড
চালানো শিখিয়ে দিতে পার মা? মেয়ে তার মনের মত ছাত্র পেয়ে মহা খুশি।
এসো
বাবা আমি তিন দিনেই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি সবই
পারবে। তোমাকে প্রথমে কম্পিউটার অন অফ করা থেকে শুরু করব পরে ওয়ার্ডে কাজ করা
শেখাব তারপরে ইন্টারনেট ব্যবহার করা, নানা কিছু সার্চ করে ইন্টারনেট থেকে দেখে
নেয়া,
ই মেইল করা এগুলি আস্তে আস্তে সব শিখিয়ে দেব।
বাহ!
মনের আনন্দ চেপে রাখা কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না তাই চুপচাপই রইলাম। মেয়ে তার কাজ
শুরু করে দিল। অনেক কিছুই শেখাল আমিও শিখলাম। ফল যা হল তা একেবারে মন্দ বলার উপায়
নেই।
কি
বোর্ড চেপে চেপে, ছড়া, পদ্য, গল্প এমনকি
উপন্যাস পর্যন্ত লিখতে পারছি। আমার শিক্ষা গুরুও খুশি আমিও মহা খুশি। ক্রমে ক্রমে
আমার নিজের ওয়েব সাইট, ব্লগ
বানানো শিখে ফেললাম।
এই
যে এতক্ষণ ভরে সাতকাহন গীত গাইলাম সে যে কেন গাইলাম তা কি কিছু বুঝতে পেরেছেন? এটা
হল মাত্র ভূমিকা এবার শোনেন আসল ঘটনা। একটা কথা কানে কানে বলে যাই, দেখবেন
কাওকে বলবেন না, আমি কিন্তু আমার প্রিয়তমা পত্নী দেবীকে মোটেই ভয়
পাই না। (সত্য না মিথ্যা জানি না)।
সেদিন
এমনি করে কি বোর্ডের বোতাম চেপে চেপে একটা গল্প লিখছি আর প্রিয়তমা এসে বললেন
এই, দোকান
থেকে নুডলস নিয়ে এসো বিকেলে রান্না করব। লেখা ছেড়ে উঠে গিয়ে পাশের দোকান থেকে এনে
দিলাম। ফিরে আবার বসেছি তখন
এই, যাওতো
দেখ রান্না ঘরের জানালাটা খোলা আছে কিনা দেখে এসো খোলা থাকলে বন্ধ করে দিও মাছ
ভেজে রেখেছি বিড়াল ঢুকলে সব খেয়ে ফেলবে যাও এক্ষণই যাও।
আমি
গল্পের নায়িকাকে নৌকা ডুবি থেকে বাচাতে গিয়ে জানালা বন্ধ করার কথা ভুলে গেলাম আর
অমনি একটু পরেই আবার তাড়া
কি
হল জানালা বন্ধ করে এসেছ?
না
ভুলে গেছিলাম
যাও
এক্ষণই যাও। সারাদিন বসে বসে কি কর? তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না। তোমার
কম্পিউটার বন্ধ করবে নাকি আমাকে উঠতে হবে?
ভয়ে
আমার প্রাণ পাখি প্রায় খাঁচা ছেড়ে যাবার উপক্রম হল কিন্তু অনেক সাহস করে বললাম
আহা
রাগ করছ কেন অন্তত কিছু অন্ন ধ্বংস তো হচ্ছে
হ্যাঁ
শুধু তাই হচ্ছে , যাও কথা না বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে এসো
অগত্যা
উঠে গেলাম। জানালা বন্ধ করে দেখি পানির ফিল্টার থেকে পানি লিক করে ডাইনিং স্পেসের
মেঝে ভেসে যাচ্ছে। গিন্নিকে বলার সাহস না পেয়ে (বললেও সে আমাকেই মুছতে বলবে) ঘর
মোছার ন্যাকরা আর বালতি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম আর অমনি তিনি রেগে এক ঝারি দিয়ে বললেন
ঘুমটা মাত্র লেগে আসছিল দিলেতো ভেঙ্গে! কি হয়েছে?
কাঁচুমাচু
করে ওগুলির ঠিকানা জানতে চাইলাম
এগুলি
দিয়ে এখন কি করবে?
কাহিনী
শোনালাম।
যাও
দেখ রান্না ঘরের সিংকের নিচে ন্যাকরা আর বাথ রুমে কাল বালতি আছে, দেখবে
লাল বালতি কিন্তু নিও না।
আমার
মনে কিন্তু তখন গল্পের নায়ক নায়িকা এখন কি করবে কোথায় যাবে তাই নিয়ে একটু ভাবনা
কাজ করছে আর আমি ভুলে গিয়ে বাথরুম থেকে বিপদ জনক রঙ লাল মনে করে লাল বালতি আর
ন্যাকরা নিয়ে ফ্লোর মুছে ওখানেই রেখে চলে এসে আবার মাত্রই কি বোর্ডের সামনে বসেছি
আর গিন্নি তখন বাথরুমে যাবার জন্য উঠেছেন। তিনি রুম থেকে বের হয়ে লাল বালতিতে ঘর
মোছার ন্যাকড়া দেখে তেলে বেগুনে ঝাঁজ করে উঠলেন
করেছ
কি এটা, এই কাপড় ধোয়ার বালতি এখানে কেন?
নিজে
ভুল করেছি এখন স্বীকার না করে উপায় নেই। সাহস করে অকপটে (সত্যের নাকি জয় হয়) বললাম
ওটায় ফ্লোর মুছে রেখেছি!
সারা
দিন কি কর? একটু চোখেও দেখ না যে কাল বালতিতে ঘর মুছে? কর
কি?
(ঘর মোছার বালতির দিকেও আমাকে নজর দারি করতে হবে কখনও কি ভেবেছিলাম?)
হ্যাঁ
তাইতো ভুল হয়ে গেছে। আচ্ছা আবার হলে এমন হবে না এবার একটু থাম। ওদিকে নায়কের যাবার কথা ছিল পার্কে কিন্তু এই
হাঙ্গামায় তাকে নিয়ে গেলাম নদীর পাড়ে। যা হবার তাই হল। কাহিনীর বিভ্রাট। আবার
সেখান থেকে নতুন করে লিখতে হল।
সন্ধ্যার
পর লিখতে বসেছি আর তিনি টিভি দেখছেন। আমি বললাম কি দেখ আমি তোমার এক মাত্র সোয়ামী, আমি
একটু আধটু লিখালিখি করে মনের সুখ পাবার চেষ্টা করি, আমি যখন
লিখতে বসি তখন দয়া করে আমাকে কিছু বল না।
লিখতে লিখতে গল্পের ক্লাইমেক্সে এসে পড়েছি একটু পরেই শেষ হবে এমন সময় খোঁচা দিয়ে
বলল
কি
হয়েছে চশমাটা চাইছি না?
আচ্ছা
চশমাটা এগিয়ে দিলাম। আবার লেখা শুরু করেছি লেখার গভীরে চলে গেছি আবার এক ধমক
কি
হল সাউন্ড কমিয়ে দিতে বলছি শুনছ না।
সাউন্ড
কমিয়ে দিয়ে এবার মধুর সুরে বললাম ওগো প্রিয়তমা, তুমি হলে
আমার ঘরের সু গৃহিণী আমার প্রিয়তমা রমণী, জানত সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে
হুম, বুঝলাম
কিন্তু এত মধুর কথা কিসের জন্যে?
দেখ
তোমার একমাত্র সোয়ামী একজন লেখক, কত কি লিখছে তুমিতো আর এগুলি পড়ে দেখ না
কাজেই বুঝতে পার না কত কি অমূল্য লিখা লিখছি, কাজেই
বলছিলাম কি লেখার সময় অন্তত আমাকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকলে ভাল বৈ মন্দ হবে না।
জান না, মাইকেল
মধুসূদন দত্ত যখন লিখতেন তখন তার স্ত্রী ডরোথি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমার মাইকেলের কাগজ বা কলমের কালি ফুরিয়ে
যায় তাহলে কে এনে দিবে? ও যে সারা রাত ধরে সাদা কাগজে লিখে যাবে! ভয়ে বসত না যদি ঘুমিয়ে পড়ে!
হুমায়ুন আহমেদের ২য় স্ত্রী শাওন বলেছিল “একজন লেখক লিখছেন, তার থেকে পবিত্র দৃশ্য আর কিছু হতে পারে
না।”
তাই
বলছিলাম কি একজন লেখককে একটু সাহায্য কর! বলা যায় না দেখবে আমি হয়ত একদিন হুমায়ুন
আহমেদ হয়ে যাব তখন কি হবে? ভেবে দেখেছো? ভাবতো একবার, সবাই যখন
আমার প্রশংসা করবে, অটোগ্রাফ নেয়ার জন্যে বাড়িতে লাইন পড়ে যাবে, টিভিতে আমার ইন্টারভিউ নিবে তখন গর্বে অহংকারে তোমার
পা মাটিতেই পড়তে চাইবে না!
তোমাকে
কত কি কিনে দিব তার কি কোন হিসেব আছে? হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে সেন্ট মার্টিনে বাড়ি
করে দিয়েছিল আর আমি তোমাকে কাশমীরে বাড়ি করে দিব, তুমি মনের সুখে পায়ের উপরে পা
রেখে সামনের ঝুর ঝুর করে ঝরা তুষার দেখবে আর কফি খাবে!
হ্যাঁ
বুঝেছি, এখন যাওতো আধা কেজি কাঁচামরিচ নিয়ে এসো।
হাত
থেকে চিনামাটির পেয়ালা পাকা মেঝেতে পড়ে যেমন খান খান হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে
যায় আমার লেখক হবার সাধ বাসনাও তেমনি করে ভেঙ্গে গেলো।
লেখকের
এমন বিড়ম্বনা সইবার কোন উপায় আছে কি না তার কোন সন্ধান দিতে পারেন কেও?
এর
থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় বলতে পারেন? অন্তত সবাই মিলে একটু চেষ্টা করেই দেখুন
না!
০০০০০০০০০০০০-------------------০০০০০০০০০০০০০
০০০০০০০০০০০০-------------------০০০০০০০০০০০০০
শব্দনীড়ে প্রজ্ঞা মৌসুমীর মন্তব্যঃ-
কুসুমকুমারী
দাশ নাকি রান্না করতে করতে লিখে ফেলেছিলেন ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে
কবে’,
প্রিয়
চাইনীজ লেখক can xue ছেলের হোমওয়ার্ক দেখিয়ে দিতে দিতে লিখতেন অনবদ্য গল্প। এরকম
একই সাথে সাংসারিক এবং লেখক হওয়াতে অভ্যস্ত হতে হয়। আপনিওতো অভ্যস্ত হয়ে
গেছেন। এই ব্লগেইতো দেখি আপনার কয়েকশ লেখা; তার মানে ঝরো বৃষ্টির পর রঙধনু
ওঠে…
যখন
খুব লেখার বাতিক হয় তখন আর কিছুতে মনোযোগ দেয়া যায় না -এরকম হলে দরজা বন্ধ করে মজার নোটিশ দরজায়
লাগিয়ে দিলে বেশ হয়। অথবা দূরে কোথাও চলে যাওয়া যায় কিছুদিন লেখার জন্য- কিছু
লেখককে দেখেছি বইমেলার আগে এরকম করতে…
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।