২১।
সন্ধ্যায় নেয়া ছোট ভাইয়ের দেখান সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে আর কি করবে? কিন্তু তার
পরেও একটা কাটার খোঁচা তার মনে বিঁধেই রইলো। মনি। মনিকে ছাড়া সে থাকবে কি ভাবে? আর মনিই বা
থাকবে কি ভাবে? হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো। আচ্ছা মনিকে যদি সে এবার সাথে নিয়ে যায় তাহলে তো
মনি অন্তত বছরে একবার করে যেতে পারলেও এতটা অসহ্য মনে হবে না। ওর সাথে যদি মনির
ভিসার জন্য এপ্লাই করে তা হলে কোন সমস্যা নেই, ভিসা পেয়ে
যাবে।
হ্যাঁ, তাইতো এই কথাই ঠিক। কিন্তু, এতো টাকা
পাবে কোথায়? তার নিজের ভাড়ার টাকার কোন হদিশ নেই, মনির জন্য
কোথায় পাবে? তাছাড়া বাড়ির সবাই ভাববে, ভাত জোটে না আবার বুড়ো
বয়সে হানিমুন করতে বিলাত যাচ্ছে! কিন্তু কিন্তু করতে করতেই রাশেদ সাহেব ভেবে
নিয়েছে, এই ই করতে হবে। মনি যদি বৎসরে এক বারও যেতে পারে তা হলেও অন্তত এই
দীর্ঘ চার বৎসরের বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণা পোয়াতে হবে না। আর একটা কথা হচ্ছে এখন মনে
হচ্ছে চার বৎসর, আসলে যে এর চেয়ে বেশি হবে না তাই বা কে জানে।
-মনি, ঘুমিয়েছ?
-না, তুমি যেভাবে ধরে রেখেছ তাতে ঘুম আসে?
-এই সংলাপ আবার কবে আমদানি করলে, আমি কি এই
নতুন ধরে রাখলাম, ধরে তো রয়েছি আজ ছাব্বিশ বছর ধরে।
-কিছু বলবে?
-হ্যাঁ, বলছিলাম কি, একটু আমতা
আমতা করে বলেই ফেললো, তুমিও চলো না আমার সাথে
মনিরা কিছু না বুঝে বললো-
-সাধে কি আর আমি পাগল বলি?
-না সাধে বলবে কেন আমি তো পাগল, আর এজন্য তো
তুমিই দায়ী, তুমিই আমাকে পাগল বানিয়েছ।
-আচ্ছা ঠিক আছে এজন্য যে শাস্তি দিতে চাও কাল দিও এখন ঘুমাও।
বলেই শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে স্বামীর গায়ে মাথায় চুলে হাত বুলিয়ে
দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিল।
সকালে উঠে আবার মনিকে কাছে ডেকে নিয়ে বললো-
-তুমি তো পাগল বলেই খালাস, আমার কথাটা একটু মন
দিয়ে শোন।
-বল।
রাশেদ সাহেব রাতের ভাবনা গুলি আবার বুঝিয়ে খুলে বললো । আরও বললো যে নয়া মামার অনেকের সাথে
জানা শোনা আছে তাদের কারো ট্রাভেল এজেন্সি আছে, তাকে বলে
দেখি যদি বাকিতে বা অন্য কোন ভাবে দুইটা টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারে।
শুনে মনিরা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-টিকেট দুইটা কেন?
-বারে, রাতে কি বললাম আর এতক্ষণে বা কি বললাম?
-না, না, তা হবার নয়। তুমি এভাবে ভেবো না, এসব এই
মুহূর্ত সম্ভব নয়, সবাই বলবে কি?
-সবার কথা বাদ দাও, আমি তো তোমাকে নিয়ে হানিমুন করতে বা রং
ঢং করতে যাচ্ছি না, শুধু তোমার ভিসার একটা ব্যবস্থা হয় এই জন্য।
তুমি যেয়ে অন্তত এক সপ্তাহ থেকে এলেও হবে। এবার আমার সাথে গেলে যত সহজে ভিসা হবে
পরে এমন সহজে আর হবে না। দেখ এক নাগারে এতো দিন আমি আমার মনিকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে
পারবো না।
-থাকতে কি আমিও পারবো?
-তাহলে আর এমন করে বলছ কেন?
মনিরা অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হলো না।
-দেখ মনি, আমি যদি এতো দিন তোমাকে ছাড়া থাকি তাহলে আর
আমাকে সুস্থ ফেরত পাবে না, নিশ্চয়ই আমি পাগল হয়ে যাব। তুমি কি বাকী
জীবন এক জন পাগলকে নিয়ে চলতে পারবে?
শেষ পর্যন্ত মনিরাকে হার মানতেই হলো।
নাশতা খেয়ে রাশেদ সাহেব বের হয়ে সোজা মামার অফিসে গিয়ে সব খুলে বললেন।
শুনে মামা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন-
-ঠিক বুদ্ধি করেছিস। তুই তোদের ভিসার জন্য প্রসেস কর আমি টিকেটের
ব্যবস্থা করে দিব, আজ রাতেই তোকে ফোনে জানাব, টিকেট নিয়ে
তুই ভাবিস না। এখনই বাসায় গিয়ে ওয়েব সাইট থেকে ভিসা ফর্ম নিয়ে ফিল আপ করে কালই
দিয়ে আসবি। এপ্লাই করার টাকা আছে?
-না।
-তাহলে সে কথা বলছিস না কেন? একটু অপেক্ষা কর, টাকা নিয়ে যা।
একমাত্র মামাই তার যন্ত্রণা বুঝতে পারলেন। মামা হলেও প্রায় সম বয়সী, এক সাথে
বিড়ি সিগারেট খায়। মামাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে দেয়, নে। এজন্যেই
মামা বুঝতে পেরেছেন। মামার অফিস থেকেই ফোন করে মনিকে জানালেন। সবাই যখন তার থেকে
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন একমাত্র এই মামাই তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।
-কিছু খাবি?
-না, এইতো নাশতা করে এসেছি।
-তা হলে একটু চা খা এই ফাঁকে আমি কবিরকে ব্যাংকে পাঠাই?
-তা করা যায়।
কলিং বেল টিপে কবিরকে চা দিতে বলে ব্রিফ কেস থেকে চেক বই বের করে লিখে
রাখলেন। কবির চা নিয়ে এলে তার হাতে চেকটা দিয়ে দিলেন। চা খেতে খেতেই কবির টাকা
নিয়ে এলো।
টাকা নিয়ে খুশি মনে মামার অফিস থেকে বের হয়ে সোজা বাড়িতে এসে ছোট
ভাইয়ের কম্পিউটার অন করে ব্রিটিশ হাই কমিশনের ওয়েব সাইটে খুঁজে খুঁজে ভিসার ফর্ম
বের করে প্রিন্ট করে তা পূরণ করে মনিরাকে ডেকে সই স্বাক্ষর দিতে বললো ।
মনি ইতস্তত করছে দেখে রাশেদ সাহেব বললো-
-নাও সই কর, ভয় কিসের তোমার সতীন আনতে যাচ্ছি না
তোমাকে নিয়েই রংগ লীলা করতে যাচ্ছি ভয় পেয়ো না।
-আমি সে ভয় পাচ্ছি না। আমি জানি আমাকে আল্লাহর রহমতে সতীনের মুখ দেখতে
হবে না, সে ব্যাপারে আমার কোন ভয় নেই। আমি ভয় পাচ্ছি অন্য কারণে।
-আহা সই করতো, ভয়ের কোন কারণ নেই, যা হবার
হোক। কাল সকালে চলো এগুলি জমা দিয়ে আসি।
-না কাল না।
-তাহলে?
-বুধবারে চলো।
-মানে আজ সোম বার, তুমি পরশুর কথা বলছ?
-হ্যাঁ, তোমার সব শুভ কাজ বুধ বারেই হয়, এ যাবত তাই
দেখে আসছি।
-আচ্ছা বুঝেছি, তাহলে তাই হবে পরশুই চলো।
রাতে মামা ফোন করে রাশেদকে চাইলেন, রাশেদ ফোন
ধরতেই ও পাশ থেকে মামা বললেন
-হাই কমিশনে গিয়েছিলি?
-না।
-কেন?
-মনি রেডি ছিলোনা তাই কাল যাব।
-আচ্ছা ঠিক আছে। টিকেটের ব্যাপারে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে
পাওয়া যাবে কিন্তু শর্ত হচ্ছে এক মাসের মধ্যেই টাকা দিতে হবে। কি করবি, পারবি?
-হ্যাঁ তা পারা যাবে।
-তাহলে তোরা কালই যা দেখ কি হয়, আমাকে জানাবি।
[চলবে] Back to home
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।