৬৬।
গতরাতের
মত আজও প্রায় সাড়ে এগারোটার পরে আনোয়ার এসে হাঁক দিল মারুফ আটাও আটাও শেষ কর। এবার
শুরু হলো গুছানোর পালা। ফ্রিজ থেকে যা যা বের করেছিলো সেগুলি যা রয়েছে তা ছোট ছোট
আইসক্রিমের বাক্সের মত
কন্টেইনারে ঢেলে বড় ট্রেগুলি সব সিংকে জমা হচ্ছে। ওদিক
থেকে কাস্টমারের প্লেট পেয়ালা খালি ডিশ ইত্যাদি জমে পাহাড়ের মত হয়ে গেছে তবুও মাঝে
দুইবার বেশ কিছু ধুয়ে দিয়েছে। চামচ, কাটা চামচ, টেবিল ছুরি এগুলিকে বলে সিলভার। সিলভারগুলি পাশে নিচে একটা
বালতিতে জমা করে রাখে। সিলভারও এক বালতি ভরে পরি পরি ভাব। মাঝে একবার অর্ধ্বেক বালতির কিছু কম ধুয়ে
দিয়েছিলো ওগুলি আবার এখান থেকে ধুয়ে বালতিতে একটু লিকুইড সাবান দিয়ে গরম পানি সহ
দিয়ে দেয়। সামনের লোকজন ন্যাপকিন দিয়ে মুছে নেয়। হাতের দিকে দেখে হাত কাল হয়ে গেছে, কত যে কেটেছে তার
হিসাব নেই। বেশি বড় না তবে যন্ত্রণাদায়ক। নুরুল ইসলাম ড্রিঙ্কস এনে দেখিয়ে দিল এটা
ডায়েট। রাশেদ সাহেব তুলে নিলেন। এক পেয়ালা রাইস নিয়ে একটা চামচ নিয়ে খাওয়া শুরু
করেছে ওমনি কবির বললো-
-ভাইছাব
একটু পোলাও রাইস গরম করে দেন কুইক।
পেয়ালা
রেখে তাকে যোগান দিলেন। কবির বললো -
-আপনে
এভাবে খেতে পারবেন না। পাশে রাখেন, চামচ দিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শেষ করবেন। নিশ্চিন্তায় বসে
খাবার মত এতো সময় কোথায়?
গতরাতের
মতই কবির সাহায্য করছে।
ধোয়া
টোয়ার কাজ শেষ। দুইটা বড় বিন ব্যাগ ড্রাম সহ দুইজনে ধরে বাইরে কাউন্সিলের বিন
কন্টেইনারে ফেলে এসে দেখে সবার কাজ প্রায় শেষ। আগেই মপের বালতি চুলায় দিয়ে
গিয়েছিলো। পানি গরম হয়ে গেছে এবারে ব্লিচ, সাবান আর সুগন্ধি মিশিয়ে ফ্লোর
মুছে বালতির পানি বাইরে ফেলে ব্রাশটা যায়গা মত রেখে এসে দেখে সবাই খাচ্ছে।
-আসেন
ভাই খেয়ে নেন।
ঘড়ি
দেখে একটু চিন্তা করে বললো-
-না
আপনারা খান আমি এখন কিছু খাবো না, দুইটার দিকে একেবারে সেহেরি খেয়ে শুয়ে পরবো।
-আরে
কি বলেন শরীর খারাপ হবে!
-না
তখন যে রাইস খেলাম ওতেই হবে আপনারা খেয়ে নেন আমি উপরে নামাজ পড়ে নিই।
-ঠিক
আছে যান রেস্ট করেন।
-আচ্ছা
কাল সকালে বারোটায় নামতে হবে তাইনা?
-হ্যাঁ
কাল বারোটায় নামলেই হবে।
-তাহলে
আমি আসি।
রাশেদ
সাহেব উপরে চলে গেলেন। কাপর বদলে কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে উঠে গোসল করে এসে নামাজ
পড়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে জানালার ধারে দাঁড়ালেন। গত রাতের মত একই দৃশ্য। আজ যেটা
নতুন লক্ষ্য করলেন তা হলো মহিলাদের পরনের স্বল্প বসন। গরম পোষাক নেইই সাধারণ কাপর
যা আছে তাও খুবই সংক্ষিপ্ত। এই শীতের মধ্যে এই কাপর পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে
কিভাবে? অথচ দিব্বি কথা বলছে হাসছে। হাতে প্রায় সবারই একটা
করে গ্লাস যাতে রঙ্গিন পানীয়, এখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ও
হ্যাঁ, পাবে এসেছে আগুন পান
করার জন্য! তারপর নাচানাচি। ঠাণ্ডা লাগবে কোথা দিয়ে? পেটে আগুন ভরছে, এখনও হাতে আগুনের
গ্লাস। আমাদের দেশে এইরকম সময়ে এই রকম জায়গায় এই বেশে কোন মহিলাকে ভাবাই যায়না! সভ্যতা, এই হলো সভ্যতা! হাতের সিগারেট শেষ হতেই
বিছানায় এলিয়ে পরলেন।
৬৭।
শুয়ে
শুয়ে সারাদিনের ছবি ভাবতে চাইলেন। না, ভেবে আর কি হবে? এই ভাবেই যখন চলবে চলুক না! কি আছে ভাবার? তার চেয়ে মেনে নেয়াই
ভালো। মেনে নিতে না পারলে কষ্ট আরও বাড়বে। মনের মধ্যে কোথায় যেন এই মেনে নেয়াতে
একটু দ্বিধা লাগছে। কিন্তু কেন? এতো পরিশ্রম কি পারবো? টিকে থাকতে হবে! এই করে যদি নিজেই
শেষ হয়ে যাই তাহলে চলবে কি করে? ডায়াবেটিসটাই তো দিলো আমাকে শেষ করে। মাথা ব্যথা হলে ওষুধ
খেয়ে ব্যথা সারাতে হয়, মাথা
কেটে আর ব্যথা সারান যায় না। তা হলে কি করা যায়? মারুফ বলেছিলো সামনের কাজ খুঁজে
দেখতে, কিন্তু আমি কিভাবে
খুঁজবো কাকে চিনি আমি? দেখা
যাক কয়েকদিন। শুক্র শনিবার গেলো। সামনের কয়েকটা দিন দেখি কেমন। হাত দু’টার দিকে চোখ পড়ল, সব গুলি আঙ্গুল কাটা
কাটিতে ভরা,
কয়েকটা
নখ ভেঙ্গে গেছে, আঙ্গুল গুলি কালো দাগে ভরা দেখে তাকিয়ে রইলো। রাশেদ সাহেব তুমি
কি পারবে এভাবে?
গ্রেভির
ডেকচি, রাইসের ডেকচি নাড়া
চারা করতে হচ্ছে। আজকেই কোমরে টান লেগেছিলো কখন কি হবে বলা যায়? মানুষ কি সবসময়
সাবধানে চলতে পারে? ভাল
হবে তুমি সামনে কাজের চেষ্টা কর। বুঝলাম, কিন্তু—, আবার ঐ কিন্তু। আচ্ছা দেখিনা কয়েকদিন। দাঁড়াবার জায়গা যখন
হয়েছে তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থাও একটা হবে। কয়েক দিন একটু মেনে নিতেই হবে, উপায় নেই। এখানে আমার
কে আছে এমন কেও নেই যে আমাকে সব কিছু করে দিবে। আমিও কিছু জানি না
চিনি না একেবারে নতুন, কিছুদিনের
অপেক্ষায় থাকতেই হবে। সময়ই বলে দিবে কখন কি করতে হবে। ঘড়িতে পৌনে দুইটা বেজে গেছে।
না আর না এবার উঠতে হয়। উঠে নিচে যেয়ে দেখে আলু দিয়ে রুই মাছ রান্না হয়েছে তাই
দিয়ে সেহেরি খেয়ে এসে ওষুধ খেয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে কাত হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে
একা একা মনে মনে কথা বলছিলেন।
নুরুল
ইসলাম এসে বললো -চলেন ভাই সাহেব খেয়ে
আসি।
-আমি
এইমাত্র খেয়ে আসলাম, রাতে
ভাত খাইনি তাই একটু তাড়াতাড়িই খেয়ে নিলাম আপনি যান।
নুরুল
ইসলামের সাথে এখনও আলাপ হয়নি। আস্তে আস্তে আলাপটা করে নিতে হবে এক রুমে থাকি দরকার
আছে।
-আচ্ছা
ভাই এ রুমে হিটার নেই?
-জানি
না, আমিও নতুন এসেছি।
-তাই
নাকি?
-হ্যাঁ।
-কবে?
-এইতো
গত মাসের মাঝামাঝি মানে তিন সপ্তাহ চলছে।
-ও
আচ্ছা। তাহলে কি করা যায়? ঠাণ্ডা লাগে একটু একটু শেষ রাতের দিকে। আপনার লাগে না?
-হ্যাঁ
লাগে দেখি সেফ এলে বলতে হবে।
-কেন
সেফ কেন আপনার সামনেও তো দুইজন মালিক আছে।
-তা
থাকলে কি হবে ওরা এসব গুরুত্ব দেয়না। যাই আমি খেয়ে আসি।
-হ্যাঁ
আসেন এসে যদি দেখেন আমি ঘুমিয়ে পরেছি তাহলে—
-না
না ডাকব না,
বুঝেছি
ঘুমান আপনে।
লাইট নিভিয়ে দিবো?
-হ্যাঁ
ভালোই হবে।
হাতের
সিগারেট শেষ করে নিভিয়ে ফেললেন।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।