১৬৩।
রাশেদ
সাহেব এখন সাউথ ওয়েলসের কার্ডিফ ছাড়িয়ে সোয়ান সির কাছে ছোট্ট ব্রীজেন্ড শহরে থাকেন। ও
যা পড়তে আসছে কার্ডিফ বা সোয়ান সি বা তার আশে পাশের ইউনিভার্সিটিতে তা অনেক বেশি
খরচ। এতো খরচ যোগান দেবার
সামর্থ্য রাশেদ সাহেবের নেই, তাই বাবা আর মেয়ের একত্রে থাকার
ব্যবস্থাও নেই। খুকু বলেছিল তাহলে আর আমি গিয়ে কি করবো? আমি বিলাতে থাকবো আর তোমাকে
রেস্টুরেন্টের রান্না খেতে হবে তাই যদি হয় তাহলে এতো টাকা খরচ করে গিয়ে কাজ নেই। এ
কথা শুনে গিন্নী মা মানে মেঝ মেয়ে শায়লা হাসান বলেছে তাই কি!তুমি যাও। বাবা মাঝে
মাঝে আসবে আর বাবা যা খেতে পছন্দ করে তুমি রান্না করে খাওয়াবে যাবার সময় সাথে কিছু
দিয়ে দিবে যাতে কয়েক দিন খেতে পারে। মানুষে ভিসা পায় না বলে যেতে পারে না আর তুমি
এতো সহজে ভিসা পেয়ে সে সুযোগ হাত ছাড়া করবে কেন? তবুও তো মাঝে মাঝে বাবাকে দেখতে
পাবে, আমরা যে কবেই বাবাকে
দেখবো, বাবার ছবি না থাকলে
বাবার চেহারাটাই ভুলে যেতাম। তুমি যাও বড় আপু বাবাকে দেখে রেখো। ওদের মা খরচের কথা
ভেবে আসতে দিতে চাইছিল না।
শেষ
পর্যন্ত গিন্নী মার কথাই বহাল রইলো। টিকিটের ব্যবস্থা হলো। পূর্ব লন্ডনের স্টেপনি
গ্রিনের সেই বাঙ্গালি পরিবারের সাথে থাকার ব্যবস্থা হয়েছ, ছোট্ট একটা রুম ৮ ফুট
বাই ১০ ফুট সাইজ তাতে থাকবে সপ্তাহে পঞ্চাশ পাউন্ডের বিনিময়ে। তানিম খোজ খবর করে
ব্যবস্থা করে রেখেছে। আর খাবার ব্যবস্থা এখনও ঠিক হয় নি, ও আসুক, কিছু দিন দেখে গুছিয়ে
নিয়ে যা ভাল মনে করে তাই করবে। আপাতত এদের সাথেই খাবে এ জন্য আলাদা পনের পাউন্ড।
খুকুর জন্য টি মোবাইলের একটা পে এজ ইউ গো ফোন কিনে রেখেছেন, সাথে আর যা যা লাগবে
বাড়ি থেকে যাতে বোঝা টেনে আনতে না হয় তার সবই কিনে গুছিয়ে রেখেছেন। যাবার
সময় সাথে নিয়ে
যেতে হবে।
দুপুরের
পর স্নো থেমে গেল, মনে
একটা জোড় পেলেন। রাত ১০টায় কোচ। হয়ত অতক্ষণে মোটর ওয়েতে যা বরফ জমেছে তা সরে
যাবে বা সরিয়ে ফেলবে। মোটর ওয়ে কি আর বন্ধ থাকলে চলে?
সারাটা
দিন একটা কেমন যেন ছটফট ভাবের মধ্যে গেল। কত গুলি দিন পরে খুকুকে দেখতে পাবে! কেমন
যেন এক মিশ্র অনুভূতি। ওর আসার সম্ভাবনা না হলে হয়তো এমন লাগত না। মনে জমে থাকা
কিছু দুঃখ,
আনন্দ, অস্থিরতা এবং মায়া সব
কিছু মিলে মিশে কেমন যেন ভাব। ওর জন্য কেনা সব জিনিস পত্র আগে থেকে প্রায় গুছানো
ছিল তার পরেও বার বার নামিয়ে দেখছে কিছু ভুলে ফেলে যাচ্ছি নাকি। ফেলে গেলেই আবার
লন্ডন থেকে কিনে নিতে হবে। এতো দূর যেতে আসতেই ৭/৮ ঘণ্টা লেগে যায়। একটা ফর্দ করে
রেখেছিলেন সে ফর্দটা খুঁজে পাচ্ছে না। কোথায় যে রেখেছে কিছুতেই মনে হচ্ছে না।
দুপুরে খাবার কথা ভুলে গেছে। সারা দিন ভরে এই করছে। হঠাৎ মনে হল যাবার টিকিটটা ঠিক
আছে নাকি? হুকে ঝুলিয়ে রাখা প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দেখলেন, এইতো টিকেট রয়েছে। ওহ!
এই যে টিকিটের ভেতরেই সেই ফর্দ। মনে করেই রেখেছিলেন টিকেট আর এটা এক সাথে থাকলে হারাবার সুযোগ থাকবে না।
অথচ সময় মত ভুলে বসে আছে। যাক বের করে আবার মিলিয়ে দেখলেন, হ্যাঁ সবই ঠিক আছে যা যা কিনেছে।
ওভার কোট,
গরম
হ্যান্ড গ্লোভস,
গরম মোজা, থার্মাল ইনার, কিছু হাড়ি পাতিল, বাসন পেয়ালা, গ্লাস, কাপ, বিছানার চাদর থেকে
বালিশের কভার,
২/৩টা
নানা সাইজের তোয়ালে, পায়ের
স্যান্ডেল,
একটা
মোবাইল ফোন এই সব। সুটকেস গুছিয়ে রেখে একটু চা খাবার জন্য কিচেনে গেলেন। ইলেকট্রিক
জগে পানি ভরে সুইচ অন করার পর মনে হলো দুপুরে কিছু খায়নি। এমন
সময় কেও
উপর থেকে নিচে নেমে আসছে শুনতে পেলেন। একটু অপেক্ষা করে দেখলেন নাসির আসছে।
-কি
রাশেদ ভাই লাঞ্চ করেছেন? নাকি মেয়ে আসার আনন্দে ভুলে গেছেন?
-ঠিকই
বলেছ। ভুলেই গেছিলাম এই মাত্র মনে হলো আর ভাবছিলাম কি খাব! চায়ের পানি দিয়েছিলাম, থাক এখন চা খেতে হবে
না আগে কিছু খেয়ে নিই পরে চা খাই।
-জানেন
রাশেদ ভাই আমার কি মনে হচ্ছে?
-না
কি করে জানব?
তুমি তো
কিছু বলনি।
-মনে
হচ্ছে আমিও যদি আপনার সাথে লন্ডন যেতে পারতাম!
-তাহলে
আমারও ভাল লাগত কিন্তু দুইজনে একসাথে ছুটি পাওয়া যাবেনা নাসির!
-হ্যাঁ
তাই বসে আছি। আপনি যান, সাবধানে যাবেন আর ওকে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আসবেন। এতে যদি
দুই একদিন বেশিও লাগে ভাববেন না আমি এদিকে সামলে নিব।
-তা
আমি জানি।
-রাতে
বের হবার সময় আমি সাথে যেয়ে কোচে তুলে দিয়ে আসব কিন্তু রাস্তার যে অবস্থা তাই
ভাবছি কি হবে! নাকি ট্রেনে যাবেন?
-আমিওতো
তাই ভাবছিলাম কিন্তু কোচের টিকেট কেটে নিয়েছি তাই থাক দেখি কি হয়।
বিকেল
চারটা বেজে গেছে। রাত ১২টায় কোচ। বাসা থেকে সাড়ে এগারটায় বের হলেই হবে। মিনিট দশেক
হেঁটেই
ব্রীজেন্ড কোচস্টেশনে ঢুকে ওপাশের গেট দিয়ে বের হলেই সামনের স্ট্রিটে ন্যাশনাল
এক্সপ্রেসের কোচ দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কিচেনের জানালা দিয়ে বাইরে দেখলেন, দেখেছ নাসির স্নো পড়ছে না!
সাদা
ভাত আর ভেড়ার মাংসের কারি দিয়ে নাসির সহ দুইজনে ভাত খেয়ে দুইজনে চা বানিয়ে এনে বসল
সকালের ওই টেবিলে। পর্দা সরানোই ছিল। টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে বসল।
দৃষ্টি চলে গেল সেই দূরে যেখানে সকালে খুকু আর তার মাকে দেখেছিলেন সেখানে। চা শেষ করে
অনেকক্ষণ বসেই রইলেন। নাসিরের সাথে এটা ওটা নিয়ে আলাপ হলো।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।