বেলা শেষের গান-৪
৬।
কোথায় কি ভাবে থাকে, কি
খায় কেইবা কাপড়চোপড় ধুয়ে দেয় এসব নিয়ে আলাপ আলোচনা চলল রাতভর। রাত গভীর হলে ছেলেকে
বিছানা করে দিয়ে সবাই শুয়ে পড়ল। এক মাসের ছুটি। মা নানা রকম পিঠা, মুড়ি, চিরা, মোয়া কত কি বানিয়ে খাওয়াচ্ছে। পুকুরের মাছ ধরা হচ্ছে, রান্না হচ্ছে, বাড়িতে
ধুমধাম লেগেই আছে। হেডস্যারের কথা, তার
স্ত্রী
এবং দীপা নিপার কথা শুনে মা আশ্বস্ত হলো।
বাবা তোর নানা বাড়িতো মানিকগঞ্জের কাছেই, গিয়েছিলি? তোর নানুকে দেখে এসেছিস? মা
কেমন আছে? কত কথা! কথার কি শেষ আছে? সুয়াপুর বাজারে গেলেই স্কুলে যেয়ে আগের স্যারদের সাথে দেখা
করে। গ্রাম ভরে ঘুরে আর খেলার সাথিদের
সাথে মানিকগঞ্জের গল্প, স্কুলের
গল্প, হেডস্যারের গল্প। পুরনো বন্ধু হামিদ
এর সাথে আলাপ করে আমাদের এই গ্রামে একটা সমিতি করতে হবে, একটা
লাইব্রেরি করতে হবে গ্রামের সবাই এসে বই পড়বে। বই না পড়লে কি কিছু শেখা যায়?
সমিতি করবি, লাইব্রেরি
করবি টাকা পাবি কোথায়? হামিদ জিজ্ঞেস করে। কেন সব বাড়ি বাড়ি
ঘুরে চাঁদা তুলব আবার আমাদের যখন স্কুল বন্ধ থাকবে তখন আমরা নিজেরা কাজ করে সে
টাকা এখানে জমা করব, এতেই দেখবি একদিন অনেক টাকা হয়ে
যাবে। কি কাজ করবি? দেখ এইযে সামনে বাদাম তোলার সময় আসছে, অন্যান্য ফসল তোলার সময় হবে তখন আমরা দিনমজুরের কাজ করব!
বলছিস কি তুই? তাই কি হয়, আমাদের
বাবা কি এসবে মত দিবে? কেন দিবে না, আমি
বইতে পড়েছি সবাই মিলে কাজ করলে আর সে কাজ কখনও নিচু কাজ হতে পারে না। তাছাড়া
আমরাতো আর চুরি করছি না, কাজের
বিনিময়ে পয়সা নিচ্ছি। ভেবে দেখ, এক বিঘা
জমিতে যদি আমরা ১০/১২ জন এক সাথে বাদাম তুলি বা আলু তুলি তাহলে এক বেলায় শেষ হয়ে
যাবে আর তার পরেই আর একটা জমিতে বাদাম বা আলু তোলা কিংবা গম কাটা যাই হোক করে ফেলব
এভাবে যদি আমরা সবাই মিলে এক মাস কাজ করি তাহলে অনেক টাকা হয়ে যাবে আবার ওদিকে
আমাদের নিজের সমিতিতে যদি এত টাকা থাকে তাহলে সবাই চাঁদাও দিবে। আমাদের নিজেদের
যদি কিছু না থাকে তাহলে সবাই ভাববে আমরা বাউন্ডেলেপনা করছি কেও কিছু দিবে না। সবাই
কি আর দেখবে না যে আমরা নিজেরা কাজ করে টাকা জমাচ্ছি, তাহলে
অসুবিধা কি? বেশ তাহলে চল আজই সবাইকে ডেকে আলাপ
করি।
যেমন কথা তেমনি কাজ। সঙ্গে সঙ্গে ওদের সঙ্গী
সাথীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবাইকে সন্ধ্যার পর এক জায়গায় আসতে বলে বাড়ি ফিরে এসেছিল
সেদিন। সন্ধ্যার পর সবাই এক জায়গায় হয়ে হাসানের নেতৃত্বে আলোচনা করল। সবাই বেশ
আগ্রহ নিয়ে সম্মতি জানাল। ব্যাস সেই যে আরম্ভ হলো। ভীষণ ব্যস্ত। নাওয়া খাওয়া নেই, সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলে মায়ের বকুনিও থামাতে পারল না। হামিদ, গফুর, রাজা, পুলক সবাই মিলে সমিতির নাম ঠিক করল। সমিতির নাম হবে ওদের
গ্রামের নামের সাথে মিলিয়ে “শিমলা তরুণ
সঙ্ঘ”। গ্রামে শুধু সমিতি নয়, শুধু
লাইব্রেরি নয়, মসজিদ হবে তাতে মাদ্রাসা হবে আর
এসবের নেতা হবে হাসান, সামনে যখন স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি হবে
তখন থেকেই কাজ শুরু হবে। এমনি নানা প্রস্তাব পাশ করে সবাই বেশ উৎফুল্ল মনে যার যার
বাড়ি ফিরে গেল।
[নওরোজ সাহিত্য সম্ভারের প্রকাশনায় আগামী ২০১৭ বই মেলায় প্রকাশের অপেক্ষায়।]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।