মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২৪
ওখান থেকে বের হয়ে সোজা চলে এলো
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। কিছুক্ষণ হাটা হাটি করে একটা নির্জন বেঞ্চ দেখিয়ে বলল এখানে
বসবে?
না বসলে হয় না?
কেন হবে? আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরব সারাদিন বেড়াব চাইনিজ খাব তারপরে সন্ধ্যায় বাসায়
ফিরব
বলেই নিরুর হাত ধরে একটা বেঞ্চে বসে পড়ল
আপা দুলাভাই কি ভাববে?
যা ইচ্ছা হয় তাই ভাবুক
পাশে দিয়ে এক বাদাম ওয়ালা যাচ্ছিল তাকে
দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল বাদাম খাবে?
বলে কোন জবাবের অপেক্ষা ন
করে ছেলেটাকে ডেকে কিছু বাদাম কিনল। বাদামের ঠোঙ্গা নিরুর হাতে দিয়ে বলল নাও ছিলে
দাও
নিরু ঠোঙ্গা হাতে নিয়ে হতভম্বের মত বসে
রইল। বলে কি এই মানুষটা। একটু বসে থেকে আবার কি মনে করে দুই একটা বাদাম ছিলে দিয়ে
ঠোঙ্গাটা এগিয়ে দিয়ে বলল
নেন নিজে হাতে বাদাম ছিলে খেতে ভাল
লাগবে।
নিশাত একটু অবাক হয়ে বলল
কি হলো, খুব কঠিন নাকি বাদাম ছেলা?
না কঠিন কিছু নয় তবে আমার ভাল লাগছে না
থাক ভাল না লাগল তবুও তুমি ছিলে দাও আমি
এই কাজটা মোটেই পারি না বলে আমার বাদাম খাওয়া হয় না
আচ্ছা ঠিক আছে দেন ছিলে দিচ্ছি
ছিলে দিচ্ছি মানে কি! তুমি খাবে না? তুমিও খাও, আমি কি বলেছি শুধু আমাকেই ছিলে দিবে?
আচ্ছা বললামতো দিচ্ছি
হাতের ক্যামেরা দিয়ে নিরুর কয়েকটা ছবি
নিয়ে নিল। ছবি তোলা নিয়েও নিরুর আর পশলা বাগরা। কেন ছবি তুলবেন, যদি আপনার কাছে কেউ এই ছবি দেখে ফেলে তাহলে কেমন
হবে!
কি বলছ তুমি! আমি কি সবাইকে নিয়ে এই ছবি
দেখাব ভেবেছ? এগুলি শুধু আমার কাছেই থাকবে তবে তুমি
চাইলে দেখতে পার বা নিতেও পার
না আমার এ ছবি নিতে হবে না
তাহলেতো আর কোন কথাই নেই
বাদাম খেতে খেতে ঘড়ি দেখে বলল একটা বেজে
গেছে চল লাঞ্চ করব
না লাঞ্চ করতে হবে না চলেন বাসায় চলেন
আপা চিন্তা করবে
কিচ্ছু চিন্তা করবে না, আপা জানে তুমি আমার সাথে রয়েছ এবং এই ঢাকা শহর আমি
খুব ভাল করেই চিনি কাজেই তার বোনের হারিয়ে যাবার ভয় নেই, চল ওঠ
নিরু একটু কিন্তু কিন্তু করে শেষ
পর্যন্ত নিশাতের পিছে হাটা শুরু করল
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে রমনা পার্কের
দিকের গেট দিয়ে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে নিউ মার্কেটের পাশে মিড নাইট সান এ এসে
রিকশা থেকে নেমে ভিতরে গিয়ে বসল।
বল কি খাবে
আপনার যা ইচ্ছা
আচ্ছা বলে ওয়েটারকে ডেকে নিশাতই অর্ডার
দিয়ে দিল
ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে জিজ্ঞেস
করল
বল আজকের এই দিনটা তোমার কেমন লাগছে
জানিনা
বলনা কেমন লাগছে
বললামতো জানিনা
আচ্ছা ঠিক আছে আমার কেমন লাগছে জিজ্ঞেস
করবে না?
বলেন
আমার খুব ভাল লাগছে
কেন?
কেন আবার কি এই যে তুমি সাথে আছ তাই।
আমি সাথে থাকলেই কি ভাল লাগবে?
যেদিন নোমান ওই কথা বলেছিল সেদিন থেকে
বুঝতে পারছি আমি তোমার সংস্পর্শে এলে ভাল থাকি মানে আমার ভাল লাগে
থাকেনতো বাইরে বাইরে আমার সংস্পর্শ
কোথায় পেলেন?
কেন এই যে এখন তুমি আমার পাশে আছ। কত
দিন পরে তোমাকে এই প্রথম একা পেয়েছি! ভুল বললাম আমার মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথম
তোমাকে একা পেলাম। আমার কি মনে হচ্ছে জান? আমার মনে হচ্ছে আমার আর কিচ্ছু চাই না, শুধু তুমি আমার পাশে থাকলেই হবে।
সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসা সহজ সরল এই
মানুষটার এমন আকুতি ভরা কথা শুনে নিরুর মন ভিজে গেল। এখন বুঝি তার এত দিনের
অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে অনুমান করে চোখ দুটিও কেমন যেন ভিজে এলো এবং একটু
পরেই চোখ বেয়ে এক ফোটা জল হাত ধরে রাখা নিশাতের হাতের উপর পরল আর অমনিই নিশাত চমকে
উঠে নিরুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল সে কি! তুমি কাঁদছ কেন? কি হলো নিরু! কাঁদছ কেন? রাগ করেছ? বল, নিরু বল কি
হয়েছে?
বলেই নিরুর ওড়না দিয়ে চোখ মুছে দিল।
আস্তে করে নিরু নিশাতের হাত সরিয়ে বলল
না কিছু হয়নি।
রাগ করেছ?
না
তা হলে!
নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলল
আপনার মত মানুষের সাথে কি কেউ রাগ করতে
পারে?
তাহলে?
বললামতো কিছু না
বলনা কি হয়েছে
এখন কাঁদছি না, এতদিন কেঁদেছি। জানেন সেই যেদিন আপনাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকেই আপনার মুখ থেকে এই কথা শোনার অপেক্ষায়
রয়েছি।
তাহলে এতদিন বলনি কেন?
হঠাৎ করেই নিরু মুখ তুলে হেসে দিয়ে বলল
সত্যিই আপনি বড়ই সরল মানুষ,
কিছুই বোঝেন না। এই কথা কি
মেয়েরা বলতে পারে?
মনে মনে বলল আপনি জানেন না আপনার এই
সরলতার জন্যই আপনাকে আমার এত ভাল লাগে সারাক্ষণ আপনার জন্য মন এত উতলা থাকে, এতদিন আপনার পথে চেয়ে অপেক্ষায় ছিলাম।
১৫।
এর পরে নিশাত যতদিন দেশে ছিল প্রায়
প্রতিদিন নিরুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কবে
শুরু হবে সেই রুটিন জানার জন্য বা ভিন্ন কোন অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুই
জনে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একসময় নিশাতের যাবার দিন ঠিক হয়ে গেল। কোথা দিয়ে যে
দিনগুলি চলে গেল বোঝা গেল না। মনে হলো যেন ঝরের গতিতেই দিন চলে গেল। এত দিনের
সঞ্চিত যত কথা সব যেন পাখির মত মুখোমুখি বসে এক এক করে কত কি বলতে চেয়েও সব বলা
হলো না কত বাকি রয়ে গেল। একদিন আরিচা ঘাটের কাছে পদ্মা নদীর পাড়ে বসে ঢলে পড়া
সূর্যের দিকে তাকিয়ে নিশাত বলছিল নিরু একটা গান গাও
জানেন না আমি গান জানি না
কেন ওই যে সেদিন তোমাদের বাড়িতে কুয়োর
পাড়ে বাসন মাজার সময় গাইছিলে
কবে?
সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা, তুমি তখন স্কুলে পড়
কি জানি আমার মনে নেই, আচ্ছা কোন গান?
নিঝুম সন্ধ্যায় শ্রান্ত পাখিরা......
হ্যাঁ ওটা আমার প্রিয় গান তবে এখন মনে
নেই আর তাছাড়া সেই কবে কি গুনগুন করেছিলাম এখনও কি তাই মনে থাকে?
দেখনা চেষ্টা করে, সেদিন কিন্তু আমি তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে
গানটা শুনেছিলাম, কি যে ভাল লাগছিল, আমি আজও ভুলিনি। এখনো আমার কানে সেই সুর লেগে আছে।
কি জানি আমার কিন্তু কিছুই মনে পড়ছে না।
আচ্ছা থাক, অনেকদিন আগের কথা মনে না থাকলে নেই। তুমি গান শিখ নিরু আমি ওস্তাদের
ব্যবস্থা করে দিব।
গান আপনার এত ভাল লাগে?
হ্যাঁ নিরু, সুর আমাকে পাগল করে দেয়
আমার চেয়েও গান প্রিয়?
নিশাত স্তব্ধ হয়ে নিরুর মুখের দিকে
তাকিয়ে রইল
কি হলো এমন করে কি দেখছেন?
তোমাকে দেখছি! কি বললে তুমি?
আমার চেয়েও গান প্রিয়?
শোন, গানের জায়গায় গান আর তোমার জায়গায়
তুমি। তোমার সাথে এই পৃথিবীর আর কোন কিছুর সাথে তুলনা করবে না কখনও
আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিজেই গান শিখব, সেদিন
আপাও বলছিল গান শিখব কিনা তাহলে ছায়া নটে ভর্তি হতে বলেছিল। ছায়া নটের টিচার আফরিন
মজুমদার আপার প্রতিবেশি
তাহলে তুমি ছায়ানটে ভর্তি হও, তোমার এত
সুন্দর কণ্ঠ তুমি খুব ভাল গান করবে, ছোট বেলায় বেশ গুনগুন করতে।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।