মম চিত্তে নিতি নৃত্যে

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে -[২৭]-২৫

আবার বিদায়, আবার বিরহ। তবে এবারের বিরহ আগের দিন গুলির মত নয়। একটু ভিন্ন রকমের। এতদিন দুজনে ভিন্ন ভাবে দুজনার কথা ভাবত কিন্তু এবার তাদের চলা পথ সম্ভবত একই স্রোতে মিশে যাবার পথ খুঁজে পেয়েছে।
যাবার আগে একদিন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের এক বেঞ্চে বসে নিরুর কাঁধে হাত রেখে বলল নিরু তুমি চিঠি লিখতে পারবে?
কেন?
কেন মানে? মানুষে চিঠি  লিখে কেন?
যারা চিঠি লিখে তাদের একটা নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে কিন্তু আপনার কি তেমন কিছু আছে? এ দেশ থেকে ওই দেশে ঘুরে বেড়ান আপনার কাছে চিঠি লিখব কোথায়? সাগরের ঠিকানায় লিখে পাঠাব আর সে চিঠি সাগর জলে ভেসে বেড়াবে? কোন সাগরের ঠিকানায় লিখব বলে যান
নিশাত এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেল। তাইতো কোন ঠিকানায় চিঠি লিখবে?
আমি কখন কোথায় থাকি সে ঠিকানা জানিয়ে আমি লিখব আর তুমি সেখানে লিখবে। যদিও সে চিঠি আমি কবে পাব তার কোন ঠিক নেই তবুও দেরিতে হলেও আমি তোমার ছোঁয়া মাখা চিঠিটা পাব এবং আবার কিছুদিন চলার শক্তি পাব।
বেশ তাই করবেন কিন্তু আমার কাছে লিখতে কোথায় লিখবেন?
কেন, আপার বাড়িতেই লিখব
আপা কি মনে করবে?
কেন মনে করবে?
আপা আপনাকে খুব স্নেহ করে কিন্তু চিঠি পত্র দেখলে যদি বিরূপ কিছু ভেবে নেয়?
না, আপা সে সুযোগ পাবে না, তার মনে করার মত কোন কাজই আমি করব না। তোমার কাছে যে চিঠি লিখব সে চিঠি ইচ্ছে করলে তুমি আপাকেও দেখাতে পারবে, আমি এমন করেই লিখব।
তাই কি হয়?
হবে, দেখবে এতে ভালই হবে তুমি মাঝে মাঝে তোমার চিঠিগুলি আপাকে পড়তে দিও আর হ্যাঁ আমিও আপা দুলাভাইকে মাঝে মাঝে লিখব।
এমন হলে লিখতে পারেন।

এভাবেই নিশাত কয়েকটা ভয়েজ করে ফেলল। প্রতিটি ভয়েজ শেষে দেশে এসেই আগে নিরুকে চোখে দেখার জন্য ছুটে এসেছে বীণা আপার বাড়ি। আর কেউ কিছু না বুঝলেও হয়ত বীণা আপা কিছু অনুমান করেছে। এখন আর নিরুকে হারাবার ভয় নেই। যখন যে দেশেই গেছে সেখানে বন্দরে পৌছার আগেই চিঠি লিখে খামে ভরে রাখত, মুখ আটকাত না যেন পোস্ট করার আগে সর্বশেষ কথাটা নিরুকে জানান যায়। কবে কোন বন্দরে গেছে সে দেশ কেমন, সে বন্দর বা শহর কেমন, লোকজনের পোশাক আসাক থেকে শুরু করে তাদের খাবার দাবার এবং যাবতীয় বৃত্তান্ত সহ জাহাজে কবে কি করেছে কি খেয়েছে এই সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখতে লিখতে সে চিঠি কখনও বিশ পাতা পর্যন্ত হয়ে যেত। পরের চিঠি কোন ঠিকানায় লিখবে সে এজেন্টের ঠিকানা দিয়ে দিত সাথে। নিরুর চিঠির  সাথে আপা বা দুলাভাইকেও কিছু লিখতে কখনই ভুল করত না। আপা বা দুলাভাইকে লিখত নিরুর চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি ওর চিঠি দেখে নিবেন। দুলাভাইকে কখনও ইউরোপিয়ান মেমসাহেবদের কাহিনী লিখত। আবার মাঝে মাঝে ইয়ার্কিও করত, দুলাভাই আপনি সাথে থাকলে একজন মেমসাহেব কিনে দিতে বলতাম। যখন যেখানে গেছে নিরুর জন্য কিছু না কিছু কেনাকাটা করবেই। কখনও দেখা গেছে নিরুর জন্য যা কিনেছে তাই দিয়েই ওর এয়ার টিকেটে ফ্রি লাগেজ এলাউন্স যা পেত তার অর্ধেক হয়ে গেছে। দেশে এলে নিরুকে সেগুলি দিতে গেলে কখনও নিরু কিছুই নিত না। বলত
কেউ জিজ্ঞেস করলে  কাকে কি বলব? এ নিয়ে আমি কাউকে কোন কৈফিয়ত দিতে পারব না।
নিশাত অনেক পিড়াপিড়ি করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। নিরুর ওই এক কথা। সেবার প্যারিস থেকে একটা পারফিউম এনে বলেছিল
এটাতো কেউ দেখবে না এটা অন্তত নাও।
আসলেই আপনার মাথা খারাপ।
মাথা খারাপের কি হলো?
বলে নিশাত নিরুর মুখের দিকে চেয়েছিল আর নিরু বলেছিল
এর গন্ধ আমি ঢেকে রাখব কি দিয়ে? এ কথা কবে বুঝবেন আপনি? শুধু শুধু এত খরচ করেন কেন? এসব আজে বাজে খরচ না করে টাকা জমাবেন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, মনে যেন থাকে
নিশাত ও কথায় কান না দিয়ে সেগুলি এনে যত্ন করে তার ওই আলমারিতে তুলে রাখত আর ভাবত নিরু যেদিন নিজে এই আলমারির তালা খুলে এগুলি নিবে সেদিনই ও ব্যবহার করবে এর মধ্যে পচে গলে যা হয় হোক এগুলি নিরুর।

গত কয়েকটা ভয়েজে নিশাতের বেশ উন্নতি হয়েছে। লন্ডনে পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড অফিসার হয়েছে। পাশ করল যেদিন সেদিন মা বাবা এবং বীণা আপা দুলাভাই সহ নিরুকে একসাথে চিঠি লিখে জানিয়েছিল। বীণা আপার বাসায় ফোন করে নিরুর সাথে কথা বলেছিল। আর মাত্র আড়াই বছর পরেই চিফ মেট পরীক্ষা দিব। নিরু তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করবে যেন আমি সুস্থ থেকে দিনগুলি কাটাতে পারি। আর তুমিও ভাল করে পড়াশুনা করবে। আর হ্যাঁ গানের ব্যাপারে কিন্তু আলসেমি করবেনা। দেখবে একদিন আমি সব পাব। তখন তোমাকে নিয়ে শুধু ঢাকা নয় পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়াব। তুমি আমার পাশে থাকবে। তোমার হাত ধরে চলে যাব অনেক দূরে যেখানে চির বসন্ত থাকে সেই দেশে। আমাদের দেখে আকাশের তারারাও হেসে হেসে আমন্ত্রণ জানাবে। যেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি।
এমন করে তোমার কিছু মনে হয় না নিরু?
হয়, আমারও অনেক কিছু মনে হয় কিন্তু আমারযে ভীষণ ভয় করে!
কিসের ভয়? কোন ভিয় নেই। দেখবে একদিন আমাদের সব হবে।


১৬।
এমনি করে সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, মান অভিমান, বিরহ বিরাগ নিয়ে দিন মাস বছর চলে গেল। এর মধ্যে নিশাত চিফ মেট পরীক্ষায় পাশ করেছে কিন্তু কোম্পানির কোন জাহাজে আপাতত চিফ মেটের পদ খালি নেই বলে ওই পদে পোস্টিং পাচ্ছে না তবে চিফ মেট এর বেতন পাচ্ছে। এক সময় সপ্তম ভয়েজের মাঝামাঝি একদিন নিশাতের সারা রাতে ঘুম হয়নি। মাত্র শেষ রাতের দিকে একটু চোখ লেগে আসছিল, এর মধ্যেই কোথা থেকে যেন নিরু এসেছিল। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আজ সকালে দুবাই থেকে পাওয়া চিঠির মত একই ভাষায় বারবার করে বলে গেল আপনি দুলাভাইকে বলবেন। আমার মনে হয় এখন অন্তত দুলাভাইকে বলার সময় হয়েছে। দুবাই পোর্টে হারবারে জাহাজ ভিড়ার পর এজেন্টের গাড়ি এসে যে মেইল ব্যাগ দিয়ে গিয়েছিল তাতে একটাই চিঠি ছিল আর সেটা  নিরুর লেখা নিশাতের চিঠি। এই চিঠিতেও অন্তত পাঁচ বার লিখেছে আপনি তাড়াতাড়ি দুলাভাইর সাথে যোগাযোগ করে কথাটা বলুন নতুবা আমি শেষ হয়ে যাব আর এজন্যে একমাত্র আপনিই দায়ী থাকবেন। কেন এবং কি বলতে হবে তা কিছু লেখেনি। না লিখলেও নিশাত জানে কি বলতে হবে। স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানায় শুয়ে শুয়েই চলে গেল এবার দেশ থেকে আসার আগে যখন নিরুর সাথে নবাব বাড়ির বাগানের এক পাশে বেঞ্চে বসে চিনাবাদাম খাবার সময় কথা হচ্ছিল সেখানে। আগের মত নিরু একটা একটা করে চিনা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছিল।
আপনি কি কোন দিন নিজে ছিলে বাদাম খেতে পারবেন না?
হয়ত পারব যেদিন তুমি করে বলতে পারবে। আসলে হয়েছে কি জান, ওসব দেশে লবণ দিয়ে ভাজা বাদাম প্যাকেট করা থাকে কাজেই দোকান থেকে কিনে অমনিই খেয়ে ফেলা যায়, আবার এখানে আসলে তুমিইতো ছিলে দাও, কাজেই আমাকে আর কোথাও ছিলে খেতে হয় না
ছেলা বাদাম হাতে দেয়ার সময় একটা চিমটি দিয়ে বলেছিল
তাহলে আর আপনার এ দেশে আসার দরকার নেই ওখান থেকেই কোন মেমসাহেব নিয়ে এলেই পারেন আমরাও একজন মেমসাহেব দেখতাম!
উহ কি হলো চিমটি দিলে কেন, লাগেনা? বেশতো আমি না হয় মেমসাহেব আনলাম কিন্তু তুমি কাকে আনবে? তাছাড়া তোমার মেম সাহেব কি বাদাম ছিলে দিবে?
বাদাম ছিলায় মগ্ন হয়ে বলল
আমার কাউকে লাগবে না! যে মেম সাহেব বাদাম ছিলে দিবে তাকেই আনবেন!
আচ্ছা তাকেই আনব

সেদিন সারা দিন একসাথে ঘুরেছিল। দুপুরে ম্যান্ডারিনে লাঞ্চ করেছিল আবার বিকেলে নবাব বাড়ি থেকে বাদাম তলি এসে নৌকায় করে বুড়িগঙ্গায় ঘুরেছিল। কোথা দিয়ে যে সারাটা দিন চলে গেল টের পায়নি। বুড়িগঙ্গায় সূর্য ডুবতে দেখে নিরু চমকে উঠেছিল। নিশাতের হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে বলেছিল,
তাড়াতাড়ি চলেন আমাকে সন্ধ্যার আগেই হলে ফিরতে হবে বলে এসেছি।
এমএসসি ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে বলে পরীক্ষা পর্যন্ত হলে থেকে পরীক্ষা দিবে বলে হলে এসে উঠেছে। বিগত দিনগুলিতে দুইজনে ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশে এমনি করে অনেক ঘুরেছে। সাভারের স্মৃতিসৌধে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, আরিচা ঘাটের কাছে পদ্মা নদীর পাড়ে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে ফেরার পথে একবার শাহবাগের নিচে সুপর্ণা থেকে একটা পারফিউম কিনে দিয়েছিল। আগের মত নিরু এটাও নিতে চায়নি কিন্তু নিশাতের চাপাচাপিতে নিতে হয়েছিল। এটা কি আর কেউ দেখবে! তোমার হলে রাখবে কেউ দেখবে না। যখন গায়ে মাখবে এর সুগন্ধ আমার কথা মনে করিয়ে দিবে। মনে করবে আমি সারাক্ষণ তোমাকে জড়িয়ে রেখেছি।
এই পারফিউম মেখে আপনাকে মনে করার দরকার হবে না। এমনিই সবসময় আপনি আমার সাথে থাকেন। বলছেন কেউ দেখবে না! জানেন হলের বান্ধবীরা কেমন হয়? ধারনা আছে কিছু? ওরা একেকটা বিচ্ছুর মত বিশেষ করে রোকেয়া আর নীলাতো জোকের মত লেগে থাকবে, বল না কোথায় পেলি! জানেন?



১৭।
দুবাই থেকে জাহাজ আমস্টারডাম যাবার আগে অস্থির হয়ে সাইন অফ করে শুধু নিরুর জন্য দেশে ছুটে এসেছিল চৌকস সেকেন্ড অফিসার নিশাত জামান যে কিনা আর কয়েকদিন পরেই এমনি এক জাহাজের চিফ অফিসার হবে। ক্যাপ্টেন স্টিভ বারবার বলছিল
জামান তুমি আমস্টারডাম যাবার পর সাইন অফ কর!
না, সে কথা মানেনি। তাকে শুধু বলেছিল
দেখ স্টিভ, তুমি প্লিজ আমাকে বাধা দিও না, যে করেই হোক নিরুকে আমার চাই ই চাই ওকে ছাড়া আমার জীবন ভাবতে পারিনি কোনদিন।
ক্যাপ্টেন স্টিভ অবাক হয়েই বলেছিল
হু ইজ নিরু?’
ওহ স্টিভ সরি! আমি তোমাকে বেফাঁস বলে ফেলেছি। নিরু ইজ মাই ডার্লিং এন্ড মাই ড্রিম এন্ড আই কেন নট সারভাইভ উইদাউট নিরু! গত কয়েকদিন থেকেই আমি ওকে স্বপ্নে দেখছি আর এখানে আসার পর ওর চিঠিতে জরুরী এক সংবাদ জেনেছি!
আই মিন ইউ আর টেলিং এবাউট ইয়োর লাভ এফেয়ার? যার ছবি তোমার কেবিনে সাজান রয়েছে?
ইয়েস স্টিভ, ইউ আর রাইট!
ও! রিয়েলি সি ইজ এ নাইস লেডি!
বেটার ইউ আসক ফর এনাদার সেকেন্ড অফিসার এন্ড রিলিজ মি। আই উইল জয়েন আফটার এ মন্থ হোয়েন ইউ উইল বি ইন লন্ডন!
ঠিক আছে জামান তুমি যাও আমি তোমার টিকেটের ব্যবস্থা করছি। আর দেখি ইরান বা ইন্ডিয়া থেকে কোন সেকেন্ড অফিসার পেলে তাকে দিয়ে এই এক মাস চালিয়ে নিচ্ছি তবে তুমি জানতো আমস্টারডাম থেকে আমরা মাইনর রিপেয়ারের জন্য লন্ডন যাব এবং তুমি কিন্তু আমরা লন্ডন ছেড়ে যাবার আগেই ফিরে আসবে।
হ্যাঁ ঠিক আছে তুমি দরকার মনে করলে আমার টিকেট ওই ভাবে করিয়ে নিতে পার দুবাই-ঢাকা-লন্ডন।
আচ্ছা জামান ঠিক আছে আমি তাই করছি। উইশ ইয়োর বেস্ট লাক এন্ড হ্যাভ আ নাইস টাইম উইথ নিরু।

সঙ্গে সঙ্গে দুবাইর এজেন্ট ইউসুফ বিন আহমেদ কানুর অফিসে রেডিওতে জানিয়ে দিয়েছিল।
আমাকে জরুরী ভাবে একজন সেকেন্ড অফিসার দাও, এখানে থাকতেই যেন পাই আর নিশাত জামানের জন্য দুবাই- ঢাকা-লন্ডন একটা টিকেট করে দাও ঢাকা ডিপার্চার হবে এক মাস পর। 
ওকে ক্যাপ্টেন।
ঠিক তিন দিন পরের একটা তারিখে নিশাতের ঢাকা যাবার টিকেট পাঠিয়ে দিল তার পর দিন এবং তার পর দিন ইন্ডিয়ান এক সেকেন্ড অফিসার এলো নিশাতের জায়গায়। টিকেট হাতে নিয়ে দেখে পরশু রাতে বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা যাবে এবং আগামী জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বিমানের ফ্লাইটে আবার দুবাই ট্রানজিট হয়ে গালফ এয়ারে লন্ডন। সময়মত সাইন অফ করে সিডিসিটা নিয়ে সন্ধ্যায় এজেন্টের গাড়িতে দুবাই এয়ারপোর্টে চলে এলো। সারাক্ষণ একটা কথাই মাথায় ঘুরছে,  হঠাৎ নিরু এতোটা ব্যস্ত হলো কেন? এমন কি হয়েছে? নিরু ভাল আছেতো? গত দুই বছর ধরেই নিরু বলছে আপনি দুলাভাইকে বলুন। কিন্তু নিশাতই বলতে পারছিল না, ভেবেছিল চিফ অফিসার না হয়ে নিরুকে আনবে না। যতবার ঢাকায় গেছে প্রতিবারেই সিঙ্গাপুর থেকে কেনা ইয়াশিকা ইলেক্ট্রো ৩৫ জিএসএন ক্যামেরা দিয়ে অনেক ছবি তুলেছে এবং তখন দেশে রঙ্গিন ছবি ওয়াস প্রিন্ট হতোনা বলে সিঙ্গাপুর কিংবা মিডল ইস্টের কোথাও থেকে প্রিন্ট করিয়ে নিত। ছবিগুলি নিরুকে দেখাবার পর সব নিশাতের আলমারিতে যত্নে রেখে দিয়েছে। কিছু ছবি নিয়ে যেত সাথে করে। জাহাজে ওর রুম সাজাত নিরুর ছবি দিয়ে। সাত বছরের ছবি গুলো বছর অনুযায়ী ভাগ করে করে সাজাত। বিয়ের পর সবাইকে এই ছবি দেখিয়ে চমকে দিবে বলে দেশে কাউকে এই ছবি দেখাত না।

দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করার পর রাতের ডিনার সার্ভ করল। তার পরে প্লেনে বসে পাঁচটি ঘণ্টা ধরে এক নিরু ছাড়া আর কোন চিন্তা মাথায় আসেনি। দূর সম্পর্কের চাচার মেয়ে নিরুকে কাছে থেকে দেখার কথা আজও ভুলেনি। নিশাত যখন সবে মাত্র ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে জয়েন করতে লন্ডন যাচ্ছে। নিরু তখন কলেজে ভর্তি হবে। দেখা অনেক হয়েছে। একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি। যদিও নিশাতের বাবা চাকুরী উপলক্ষে করাচী সহ বিভিন্ন শহরে বসবাস করে কিন্তু গ্রামে নিয়মিত যাতায়াত আছে। জমিজমা দেখতে হয়, শীতের খেজুর রস, পিঠা, আম বাগানের আম খেতে হয় তাছাড়া ঈদ পার্বণে গ্রামে আসতেই হয়। তখন অনেক দেখেছে কিন্তু কখনও তেমন করে চোখে পড়েনি।
[চলবে]

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।