৪১।
হাত মুখ
ধুয়ে শীতের কাপড় পরে দুই জনে এক সাথে নিচে নেমে এলো।
ভাবী
জিজ্ঞেস করলো
-কি
ব্যাপার কোথাও যাবেন বুঝি?
-হ্যাঁ
ভাবী যাই দেখি একটু ঘোরাঘুরি করে আসি।
-যান
ভালো লাগবে। ঘুরে আসুন, ইফতারের আগেই এসে পরবেন।
ইস্ট
একটন টিউব স্টেশনে এসে অল (ছয়টা জোন) জোনের দুইটা টিকেট নিয়ে ট্রেনে চেপে ম্যাপ
দেখে দেখে এখান থেকে সেখানে, সেখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে নানান জায়গায় সারাটা
দিন ভরে ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু এক নজর দেখে গেলো। মনে স্বস্তি পাচ্ছে না, কোথাও ভাল
লাগছে না শুধু যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে জানে না। কোন গন্তব্য নেই। ট্রেনে উঠে বসছে
হঠাৎ যেখানে ইচ্ছা হচ্ছে সেখানেই নামছে আবার একটু ঘুরে এসে ট্রেনে চেপে বসছে। প্রথমে লন্ডনের বাঙ্গালি প্রধান এলাকা হোয়াইট
চ্যাপেল এসে এটা সেটা কিছু দেখে গেলো। বাকিংহাম প্যালেস, ট্রাফেলগার স্কয়ার, ন্যাশনাল আর্ট
গ্যালারী,
সবই টিউব
থেকে নেমে স্টেশনের উপরে এসে এক নজর চোখের দেখা দেখে আবার টিউবে। ব্রিটিশ
মিউজিয়ামের বাইরে থেকেই চলে এসেছে ভিতরে যাবার সময় বা মন মানসিকতা নেই। পাশের একটা
ফোন বুথ থেকে বাড়িতে মেয়েদের সাথে কথা বললো । তারপর
সবার শেষে
টেমস নদীর পাড়ে এক জায়গায় ফুটপাথের পাশে রেলিং ধরে দু’জনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে
থাকলো টেমসের বয়ে যাওয়া স্রোতের দিকে।
-মনি দেখ, এইতো টেমস নদী, টাওয়ার ব্রিজ, এতকাল যা ছবিতে দেখেছ
আজ তা নিজ চোখে দেখে নাও।
সুদূর
বাংলাদেশ থেকে দুই জন ভাগ্য বিতাড়িত নর নারী
টেমসের পাড়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে কি বুঝতে পারছে কিছু? এরা যে ভাগ্যের
পরিবর্তনের জন্য এখানে এসেছে! ওদের দেশের মাটিতে ভাগ্যের জমি এতই অনুর্বর যে শেষ
পর্যন্ত তাদের ওখানে ঠাই হয়নি! অন্তহীন জ্বালা বুকে চেপে এই যে ঘুরে বেড়ানো এর শেষ
কোথায়? এর পরিণতি কি? এ ভাবে কতদূর যেতে হবে
কোথায় যেতে হবে তাও ওরা জানে না।
-মনি
শুনছ!
-বল।
-আজ
এখানেই কিছু খেয়ে ইফতার করি? চলো আবার হোয়াইট চ্যাপেলে যাই ওখানে কত বাঙ্গালি
রেস্টুরেন্ট দেখে এলাম।
-না
পাগল, চলো বাসায় চলো, ভাবী বলে দিল না যে
ইফতারির আগে চলে আসতে।
-চলো তা
হলে।
বিকেলে
সাড়ে তিনটার দিকে ইফতারির কিছু আগে এসে দেখে ভাবী বিশাল আয়োজন করেছে।
তাই
দেখে মনি বললো -দেখেছ না এলে কি হতো?
ফিরোজ
পিছনের বাগানে কি যেন করছিলো ওদের সাড়া পেয়ে ভিতরে এসে বললো-
-এই যে
স্যার এতো দেরি করলেন, কোথায়
গিয়েছিলেন?
-আরে এত
ব্যস্ত হচ্ছ কেন ইফতার করে নিই সব বলবো। ম্যাডামকে লন্ডন দেখিয়ে নিয়ে এলাম
শেফালি বললো
-তাহলে আর আমি কি দেখাব?
-না
আপনার জন্য কিছু বাকী রেখেছি, আমি কি এতই বোকা?
ইফতার
খেয়ে নামাজ কালাম পড়ে ফিরোজ বললো চলো একটু ঘুরে আসি, আমি তোমাদের জন্য সেই কখন থেকে
বসে আছি।
-কি মনি,
আবার যাবে?
-চলো।
এবারও
ভাবীই গাড়ি চালাচ্ছে আর ফিরোজ পাশে বসে বিবরণী দিয়ে যাচ্ছে। ওই দেখ এটা হচ্ছে
হোয়াইট সিটি এখানে বিবিসি ব্রডকাস্টিং অফিস, এই জায়গার নাম মার্বেল আর্চ, এটা অক্সফোর্ড সার্কাস
এখানে বড় লোকদের শপিং সেন্টার। এই ভাবে নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত সেই
টেমসের পাড়। ওই যেখানে ওরা বিকেলে এসেছিলো।
-রাশেদ বললো
ঠিক এই খানেই আমরা বিকেলে এসেছিলাম।
-তাই
নাকি?
-চলো
এখন তাহলে রাতের টেমস দেখবে।
গাড়ি
থেকে নেমে সবাই সেই রেলিং ধরে দাঁড়ালো। ফিরোজ বললো-
-ভাবী
দিনের টেমস আর রাতের টেমসের মধ্যে কোন তফাত খুঁজে পাচ্ছেন?
-হ্যাঁ, শুধু টেমসই না পুরো
লন্ডনের চেহারাই রাতে ভিন্ন রকম লাগছে। এ কি আর বলে দিতে হবে ভাই? এ যে লন্ডন মহানগরী।
আমার পরম ভাগ্য যে আপনার বন্ধু আমাকে ছেড়ে কিছুতেই এলো না। আবার আমি এসে আপনাদের
মত এত আপন জনের সাক্ষাত পেয়েছি যে তা কোন দিন ভুলতে পারবো না। ও যদি জোড় করে নিয়ে
না আসত তাহলেতো আমার আসাই হোত না, এতো কিছু দেখতেও পারতাম না।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।