৮০।
আজ
শুক্রবার। বিকেলে রেস্টুরেন্ট খোলার পর থেকেই শুরু হলো সেফ এর চিৎকার চেঁচামেচি।
রাশেদ সাহেব রীতিমত ভয় পেয়ে গেলেন, এ কয়দিন তবুও কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু আজ সবই কেন
যেন ভুল হচ্ছে। এখানে ভুল
ওখানে ভুল, আর সেই সুযোগে সেফ এর অশ্লীল গালাগালি। রাশেদ সাহেব অবাক, এই কি সেই লোক যাকে এ
ক’দিন
দেখেছে? কেমন যেন গুলিয়ে গেলো
সব কিছু। দৌড়া দৌড়ী ছুটা ছুটিও বেশি হচ্ছে। রাত প্রায় দশটার দিকে আর
পারছিলেন না। কি করবেন, কাকে বলবেন? আমি আর পারছি না। মারুফকে ডেকে বলবেন সে উপায় নেই, তার পাশেই সেফ। না, আর কুলাচ্ছে না।
কবিরকে বললে কবির বললো -
-ভাই
এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না মারুফকে বলেন।
-মারুফের
কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সেফ চ্যাঁচিয়ে বললো -
-কি, এখানে কি?
সাথে
যোগ করলেন …………………বাংলা ভাষার অনুচ্চারণ
যোগ্য অশ্লীল কিছু শব্দ যা শুধু এক শ্রেণীর লোকদের মুখেই শোনা যায়, কখনো কাগজে লেখা যায়
না। রাশেদ সাহেব মারুফের কানে কানে বললেন ভাই আমি আর পারছি না।
মারুফ বললো
-
-দেখেন, এখন কি ভাবে কি করা
যাবে, এগুলি তো শেষ করতে হবে, এখন কাকে পাবো বলেন? আচ্ছা আমি কবিরকে বলছি
সে আপনাকে সাহায্য করবে।
সোজা
হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, ব্যথায়
কোমর টনটন করছে,
হাতের
কাটা গুলিতে ভীষণ জ্বালা হচ্ছে, কিছু ধরতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কিছু করার নেই। কি আর করবে, ওই ভাবেই বাকি কাজ শেষ
করে রাত সাড়ে বারোটার কিছু পর উপরে গিয়ে কাপড় বদলেই শুয়ে পরলেন। তার পরের দিনও একই
রকম ব্যস্ততা। আজ রবিবার, কাজের চাপ কম। রাতের কাজের শেষে সেফ বললো-
-বেয়াই
কাল সোম বার আপনার অফ।
৮১।
এর
মধ্যে তিন দিন অফ গেছে। অপেক্ষায় থেকেছে পরবর্তী অফের দিন মেইল পাবে। তার নয়ন
মনিরা সবাই চিঠি লিখবে, তার মনি লিখবে। প্রতি অফের দিনে সাত দিনের প্রতীক্ষিত
মেইলের আশায় লাইবেরিতে গেছে। বাড়ি থেকে পাঠানো মেইল মন দিয়ে পড়েছ। এক বার, দুই বার, কয়েক বার পরেছে। মনে
হয়েছে কতদিন মনির চিঠি পড়া হয়নি। সেই যে বিয়ের পর মনিকে রেখে বিদেশে চলে গিয়েছিলো
তখন। তা প্রায় পঁচিশ বছর তো হবেই। সেই দিনগুলির কথা মনে পরে। মনির চিঠি পেলে কেমন
যেন হয়ে যেত। কতবার করে যে পড়েছে প্রতিটা চিঠি। পড়তে পড়তে প্রতিটা অক্ষর তার
মুখস্থ হয়ে যেত। তাকে লেখা মনির প্রথম চিঠির কথা স্পষ্ট মনে আছে। তাকে সম্বোধন
করতে গিয়ে কয়েকবার কেটে শেষ পর্যন্ত লিখেছিলো। তার মনের মত
একটা সম্বোধন লিখেছিলো, এখনও
মনে পড়ে। মনি লিখত খুব সুন্দর করে, গুছিয়ে অনেক কিছু লিখত। অনেক বড় হোত
চিঠি গুলি। সে নিজেও লিখত। তার লেখা দীর্ঘ চিঠি হয়েছিলো একুশ পাতা। মনির ছোঁয়া বয়ে
নিয়ে এসেছে যে চিঠি তা সে ফেলতে পারত না, মনির হাতের গন্ধ মাখা ছোঁয়া পাবার জন্য বালিশের
পাশে রাখতো। এখন ঘরে ঘরে ফোন, ইন্টারনেট, হাতে হাতে মোবাইল কত কি! তখন শুধু চিঠির
অপেক্ষা। কি ভাবে যে দিন গুলি গেছে পরের চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত, সে যারা ভুক্ত ভুগি
তারা ছাড়া কে বুঝবে?
মেয়ে আর
মনির লেখা অনুরোধ উপদেশের ঝুড়ি খুলে দেখেছে। তার নিজের রোজ বিবরণী পাঠিয়েছে। কবে
কি দিয়ে ভাত খেয়েছে, কি
দেখেছে, এদেশের মানুষেরা কি
ভাবে কথা বলে,
থাকার
জায়গা কেমন,
কোথায় কি
ভাবে কি করতে হয় সব কিছু খুলে লিখেছে। তবুও মনে হয়েছে মনি আর মেয়েদের হাজার
প্রশ্নের জবাব দেয়া হলো না। ঘুরে ঘুরে লাইবেরি দেখেছে। এর মধ্যে লাইবেরির স্টাফদের
সাথে খাতির হয়ে গেছে। এখন ফাঁকা থাকলে তাকে নির্দিষ্ট এক ঘণ্টা সময়ের চেয়ে বেশী
সময় দেয়। একদিন কেও ছিলো না বলে তাকে দুই ঘণ্টা দিয়েছিলো। দুপুরে সময় মত এসে
রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে গেছে। একদিন ভেবেছিলো অক্সফোর্ড যাবে। বিশ্বের সেরা
ইউনিভার্সিটি দেখে আসবে। কিন্তু কে যেন বললো অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি নিজের
গাড়ি ছাড়া দেখা কঠিন ব্যাপার, কারণ এটা এক জায়গায় না। এক ফ্যাকাল্টি থেকে অনেক দূরে অন্য
ফ্যাকাল্টি। সারা অক্সফোর্ড জুড়ে এই ইউনিভার্সিটি। তাই এমনি এক জায়গায় গিয়ে কি
দেখবেন? আর যাওয়া হয়নি। এই
শহরেই ঘুরে ফিরে দেখেছে। ছোট্ট শহর, তেমন কিছু নেই কিছু দোকান পাট আর দুইটা ব্যাংক ছাড়া। সেদিন
দুপুরে কাজ সেরে উপরে আসার সময় বাড়িতে ফোন করেছিলো। অস্থির মেয়েদের আর তাদের
অস্থির মাকে নিশ্চিন্ত করার জন্য। অল্পই কথা হয়েছে। কেমন আছ, তোমাদের পরীক্ষা কেমন
হয়েছে, আমি ভালো আছি, চিন্তা করবে না। আব্বু
তুমি সময় মত খাবে, ঠাণ্ডা
লাগাবে না,
ওষুধ
খাবে মনে করে,
আমাদের
জন্যে চিন্তা করবে না। এই ধরনের।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।