১৩৯।
এইতো, রাশেদ সাহেব আজ থেকে
বারম্যান আর দাদা হয়ে গেলেন। এখানকার লোকজন স্টাফ সবাই ভাল মনে হলো। মালিকেরা সবাই
মৌলবি বাজারের মানুষ, ভদ্রলোক।
সালিক মিয়া আগে দক্ষ ওয়েটার ছিলো কিন্তু হজ করে আসার পর
মদ ঘাটাঘাটি করতে হয় বলে
আর ওয়েটারি করেনা। আসিয়াদ আলির কাছে সেফের কাজ শিখে নিয়েছে। আসিয়াদ আলি আবার দক্ষ
সেফ। সে এখন সামনেই ওয়েটারি করে, সেও হজ করে এসেছে। সমসু মিয়া বাকি ছিলো সে এবার যাচ্ছে। সবারই
বাড়ি গাড়ি আছে,
প্রতিষ্ঠিত
ব্যবসা। এটা ছাড়াও আসিয়াদ আলির আরও অনেক ব্যবসা আছে। সাউথ ওয়েলসের ধনিদের মধ্যে সে
এক জন। বাহাদুর ওয়েটার, শ্যামল কুমি ওয়েটার। সেদিন কোন ভাবে কেটে গেলো। রাতে খাবার
সময় সবাই একসাথে টেবিলে বসে খায়। ওখানকার মত যে যেভাবে পারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এবং
কন্টেইনারে করে পানি নিয়ে খায় না। এখানে
রীতিমত টেবিলে সবাই পানির গ্লাস নিয়ে বসেছে। টেবিলের মাঝখানে ভাত আর তরকারির
গামলা। তবে সালিক মিয়া এখানে খায় না, তার স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকে তাই সে বাসায় চলে যায়। খাবার
পর কিছুক্ষণ আলাপ হলো, আসিয়াদ
আলি আর বাহাদুর ছিলো।
-দাদা
আপনি কোন পার্টি করেন?
-না
ভাই আমি কোন পার্টি করিনা।
-কি
বলেন বাংলাদেশের মানুষ কোন পার্টি করেন না এ আবার কেমন কথা!
-না
ভাই আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি রাজনীতি আর দুর্নীতি এক কথা, তাই ওসবে আমার আগ্রহ
নেই। তাছাড়া সরকারি চাকরি বাকরি করেছি বলে ওই রকম কিছুতে জড়াবার প্রয়োজন হয়নি।
এমনিই সরকারি চাকুরেদের অবস্থা জানেন তো, যে যখন আসে তাকেই সালাম জানাতে হয়। ভাল মন্দ দেখার সুযোগ
নেই।
কিছুক্ষণ
পর আসিয়াদ আলি চলে গেলো। বাহাদুর বললো-
-চলেন
আজ আর গল্প করার টাইম নেই আপনার ঘড় গুছিয়ে নেন।
-হ্যাঁ
তাই চলেন। আচ্ছা বাহাদুর ভাই আমি কিন্তু নতুন মানুষ আমাকে শিখিয়ে নিতে হবে।
-আচ্ছা
সে দেখা যাবে সে জন্য কোন চিন্তা করবেন না।
১৪০।
প্রথমে
রুমে ঢুকে বিছানার পুরনো, বালিশের কভার, লেপের কভার এগুলি খুলে বাইরে এক জায়গায় রেখে দিলেন।
শ্যামলকে ডেকে ব্রাশ আর মপের বাকেট নিয়ে আসলেন। রুম থেকে টেলিভিশন বের করে সাথের
ছোট আর একটা রুমে রাখলেন চেয়ার গুলিও ওই ঘড়ে রাখলেন। এবার পুরো ঘড় ব্রাশ করে মপ
দিয়ে মুছে ঝক ঝকে করে ফেললেন। নিজের চাদর ইত্যাদি বিছিয়ে রেখে নিচে থেকে একটা
গ্লাস, খালি কোকের বোতল ভরে
পানি আর একটা এ্যাশট্রে এনে বিছানায় বসে সিগারেট বানাচ্ছেন। সিগারেটটা নিয়ে উপরে বাহাদুরের
কাছে যাবেন ভাবছেন। এমন সময় বাহাদুর এলো।
-আরে
করেছেন কী?
চমৎকার! দেখেন একটু চেষ্টা
করলে কি সুন্দর থাকা যায়! আমি বেশি দিন হয়নি এখানে এসেছি। মাত্র এক মাস হয় তাই কিছু
বলতে পারছি না।
-ও
আচ্ছা!
-আপনাকে
তো বারে দিয়ে দিল ভালই হয়েছে। ওখানে কষ্ট একটু কম হবে, আরামে কাজ করতে পারবেন। ভাল বারম্যানেরও
ভাল বেতন,
চিন্তা
করবেন না। আরে এরা ঝানু মানুষ কাকে কোথায় সেট করতে হবে এরা জানে।
-কিন্তু
বাহাদুর ভাই আমি স্কটল্যান্ডে যে সব মদ দেখে এসেছি এখানে তো সেরকম দেখছিনা এগুলি
অন্য রকম।
-হ্যাঁ
সব জায়গায় এক হবেনা এক এক জায়গায় এক এক ধরনের চাহিদা, তবে মুল জিনিষ মোটামুটি একই ধরনের, এগুলি আমি আস্তে আস্তে
দেখিয়ে দিব।
-হ্যাঁ
বাহাদুর ভাই আমাকে একটু বুঝিয়ে দিবেন!
-চিন্তা
করবেন না, দেশি মানুষ এসেছেন যখন এটুক তো করতে হবে। সব দেখিয়ে দিব।
না আজ আর না,
শুয়ে
পরেন রাত তিনটা বেজে গেছে।
আজ
মনিকে ফোন করতে হবে। দুপুরে কাজ শেষ করে রেস্টুরেন্টের ফোন থেকে কার্ড দিয়ে বাসার
নম্বর ডায়াল করলেন, মনে
হলো কত দিন পর ওপাড়ে মনির কণ্ঠ মধুর মত কানে এসে বাজল।
-হ্যালো।
-হ্যাঁ
আমি।
-কি
খবর তোমার?
ওবান
ছেড়ে আসার পর রিতা আপা, ব্রিকলেন, নাসির এবং সবার শেষে ব্রীজেন্ডের কথা একে একে সব বললেন।
-রিতা
আপা এই কাণ্ড কিভাবে করল অবাক লাগছে, যাক একটা ভাল জায়গা পেয়েছ জেনে নিশ্চিন্ত হলাম, আমি এ কয়দিন কি
চিন্তায় ছিলাম!
-এবার
তোমাদের কি খবর বল।
-এখানে
আমরা সবাই ভাল আছি তুমি কোন চিন্তা করবেনা।
-টাকা
পয়সার কি অবস্থা কিভাবে চলছ?
-চলছে
এখনও কোন অসুবিধা হয় নি।
-আচ্ছা
দেখি এখান থেকে পাঠাতে পারি কিনা।
-পাঠাবে
যে পাবে কোথায়?
-কেন
এতো দিন বেতন পেলাম না, আর ওই যে তুমি যে ট্রাভেলারস চেক রেখে গেছিলে সেগুলি তো
আমার দরকার হয় নি, ওগুলি
ভাঙ্গিয়ে আর আমার কাছে যা জমেছে সবই পাঠিয়ে দিব।
-না
শোন সব পাঠিও না তোমার কাছে কিছু রেখ কখন কি প্রয়োজন হয়। আচ্ছা তুমি ওষুধ খাও ঠিক
মত? আর কত দিন চলবে কি
পরিমাণ আছে?
-খাই
তবে গত কয়েক দিন খুব এলোমেলোর মধ্যে ছিলাম তাই হয়ে উঠেনি, ওষুধ যা আছে তাতে আর মাস খানিক
চলবে তার পরে যে কি করবো তাই ভাবছি, দেখা যাক একটা উপায় বের করতে হবে।
-আব্বার
কি অবস্থা কেমন আছে?
-ভালই
আছে।
-মেয়েরা
ওদের দাদার যত্ন টত্ন করে?
-হ্যাঁ
করে, তোমার মেয়ে না?
-আচ্ছা
তা হলে আজ রাখি?
-আচ্ছা
ঠিক আছে।
মনিকে
রেখে নাসিরকে ফোন করলেন।
-নাসির
কি খবর তোমার?
-আমি
ডিড কোটে এসেছি। বিরাট রেস্টুরেন্ট, মালিক এক বাজে ধরনের মানুষ সারাক্ষণ ক্যাচ ক্যাচ করতেই
থাকে তার কাছে সে ছাড়া আর কেও ভাল মানুষ নেই। উপরে থাকার ব্যবস্থা আর গোসলের পানি
নিতে হয় নিচে কিচেন থেকে বালতি করে। আপনার ওখানে কেমন?
-আমার
এখানে ভাল সব দিক দিয়েই ভাল। আচ্ছা যাই হোক তুমি করতে থাক, দেখা যাক।
ফিরোজকেও
ফোন করে জানিয়ে দিলেন।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।