১০১।
বিকেলে
আবার রেস্টুরেন্টে। বাসা থেকে বেশি দূরে না, রাস্তার এপারে আলবেনিয়ন টেরেসের
দোতলায় বাসা আর রাস্তার ওপাড়ে রেস্টুরেন্ট। সাড়ে পাঁচটায় ওপেন করতে হয়। বাসা থেকে প্রবীণকে
যে রকম দেখেছে সেই ভাবে শেভ হয়ে
ইউনিফর্ম, টাই পড়ে পারফিউম মেখে পাঁচটায় বের
হয়েছে। সকালে ময়না ভাইয়ের দেখানো কাজের তালিকা অনুযায়ী সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে মেনুটা
দেখার জন্য হাতে নিয়ে বসেছে এমন সময় ময়না ভাই এলেন।
-কি
খবর সব ঠিক ঠাক আছে?
-দেখেন, আপনি একটু দেখে নেন, প্রথম দিন তো, ভুল ভ্রান্তি হতে
পারে।
-না
ঠিক আছে,
কোন
অর্ডার এসেছে?
-না এখনও
আসেনি।
-অর্ডার
আসলে লিখতে পারবেন? আচ্ছা
অর্ডার বইটা নিয়ে আসেন দেখিয়ে দেই কিভাবে লিখবেন।
অর্ডার
লেখার নমুনা দেখিয়ে দিলেন, বললেন-
-এখানে
ভিতরে যারা বসে অর্ডার দেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই, ভুল হলে সংশোধন করা যায়, তবে টেলিফোনের অর্ডার
গুলি সাবধানে লিখবেন দরকার হলে কয়েকবার রিপিট করে কনফার্ম হবেন। কারণ, ভুল হলে সমস্যা।
-আচ্ছা
ঠিক আছে চেষ্টা করবো।
-আসেন
বসি।
বলে এক
পাশে যেখানে আলাদা দুইটা টেবিল আছে, যেখান থেকে মেইন দরজা দেখা যায় সেখানে গিয়ে বললো বসেন। বসে
গল্প শুরু করলেন। কবে এসেছেন, দেশে কি করতেন, ছেলে মেয়ে কয়জন, কবে বিয়ে করেছেন, কেন এলেন এইসব। পাশাপাশি তার নিজের কথাও বলে গেলেন। এই
ব্যবসা আগে খুব ভালো চলত, তখন পুরো ফ্যামিলি এখানে এই বাসায় থাকতো। এখন লন্ডনে বাড়ি
কিনেছে, ফ্যামিলি ওখানেই থাকে।
উনি মাসে একবার যায়, ফেরার
পথে লন্ডন থেকে গাড়ি ভরে রেস্টুরেন্টের জন্য দরকারি মালামাল নিয়ে আসে, ইত্যাদি ইত্যাদি। চলেন
চা খেয়ে আসি। আবিংডনের মত এখানে সারা রেস্টুরেন্টের জন্য রাশেদ সাহেবকে চা বানাতে
হলো না। ময়না ভাই ইলেকট্রিক জগে পানি গরম দিয়ে নিজেই তার ইংলিশ চা বানিয়ে নিলেন
এমনকি রাশেদ সাহেবের হাতেও একটা কাপ এগিয়ে দিলেন। রাশেদ সাহেব তারটা বানিয়ে নিয়ে
এসে আবার সেই আগের জায়গায় বসে গল্প। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠলো, যান ফোন ধরেন। রাশেদ
এগিয়ে গেলেন।
রিসিভার হাতে নিয়ে গুড ইভনিং জানিয়ে কি খেদমত করতে পারি জানতে চাইলেন। ওপাড় থেকে
জানালো আমি একটা খাবার অর্ডার দিতে চাই। বলুন বলে লিখে নিলেন। ময়না ভাই এগিয়ে
এসেছিলেন,
দেখলেন
কি লিখছে। লেখা শেষ হলে ওপাশে থেকে জানতে চাইলো কতক্ষণ লাগবে? মায়না ভাইর দিকে
তাকাতে উনি বললো বলেন পনের মিনিট। ইয়েস স্যার ইট উইল বি ফিফটিন মিনিটস অনলি, ওকে স্যার থ্যাঙ্ক ইউ
বলে রেখে দিলেন।
ময়না
ভাই অর্ডার বই থেকে কিচেনের কপি ছিঁড়ে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো, বলে গেলো বিলের
হিশাবটা করে রাখেন আমি এটা রেডি করে আসছি। রাশেদ সাহেব একটা তৃপ্তির নিশ্বাস
ছাড়লেন, সামনের কাজের প্রথম
অধ্যায় সাকসেসফুল। দেলু মিয়াদের গালাগালি, অশ্লীল মন্তব্য, তারের জালে হাত কাটা, ভারী বস্তা টানাটানি, অহেতুক ত্রাসের মধ্যে
থাকা, সিংক থেকে গায়ে নোংরা
পানি ছিটে আসা,
অন্যের
এঁটো কাটা ছানা ছানি করা, সারা গায়ে তেল কালি লেগে থাকা থেকে রেহাই পেয়েছেন। হাত
দুটি দেখলেন,
এখনও
নখের কোনায় কাল হয়ে রয়েছে, কাটা চিহ্ন গুলি কবে মিশবে কে জানে। এখানে কি সুন্দর ফুল
বাবু সেজে কাজ করছেন। মনিকে জানাতে হবে। বাইরেই রাস্তার পাশে ফোন বুথ দেখেছে। রাতে
ডিউটি শেষ করে বাসায় যাবার পথে ফোন করবে। স্কটল্যান্ডে আসার পুরো ব্যাপারটাই মনিকে
বলার সুযোগ হয়নি। ভেবেছিলেন ওখানে যাবার পর কি অবস্থা হয় তাই দেখে পরে
জানাবে। এখানে লাইবেরি কোথায় দেলুর কাছে জানতে হবে। কাজের প্রতি খুব মনোযোগ
দিচ্ছেন,
মেনু
নিয়ে পড়ে মুখস্থ করার চেষ্টা করছেন। ভিতরে ঢুকেই সমস্ত রেস্টুরেন্ট ভরে হেঁটে
দেখেন কোন অসংগতি আছে কিনা, কোন চেয়ার একটু বাঁকা হয়ে আছে কিনা, টেবিল সেটিঙের প্লেট, কোয়ার্টার প্লেট, ন্যাপকিন, ফর্ক, নাইফ ইত্যাদি ঠিক আছে
কিনা। একটু পরেই দরজা দিয়ে এক কাস্টমার ঢুকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গুড ইভনিং স্যার। আমি টেক এওয়ের অর্ডার
দিয়েছিলাম নাম ব্রাউন। ও ইয়েস স্যার, বলে কাউন্টারে এসে বিল দেখে বললো নাইন পাউন্ড সিক্সটি
পেন্স স্যার। ভদ্র লোক পকেট থেকে দশ পাউন্ডের একটা নোট বের করে দিলো রাশেদ সাহেব
ভাংতি চল্লিশ পেনি ফেরত দিয়ে লাউঞ্জ দেখিয়ে বসতে বলে কিচেনে চলে গেলো।
-ময়না
ভাই কাস্টমার এসেছে।
-হ্যাঁ
হয়ে গেছে নিয়ে যান
বলে
একটা ব্যাগ হাতে দিয়ে দিল। সেটা এনে কাস্টমার ভদ্রলোকের সামনে আসতেই
উনি উঠে দাঁড়ালেন, এগিয়ে
এসে এক হাতে দরজা খুলে তার হাতে ব্যাগটা দিয়ে বললেন আবার আসবেন। ঘুরে দেখে ময়না
ভাই হাত মুছতে মুছতে সামনে আসছে। এই রাতে আরও তিন চারটা টেক এওয়ে
গেছে এবং দশ বারোজন ভিতরে খেয়েছে। ময়না ভাই সার্ভ করেছে। মদের অর্ডারের মদগুলি
ময়না ভাই ঢেলে দিয়েছে আর রাশেদ সাহেব সার্ভ করেছে। প্রথম বলে হাত একটু
একটু কেঁপেছে,
তবে ভয়
পায়নি। সে শুধু খাবার শেষ হলে খালি প্লেট গুলি তুলে নিয়ে কিচেনের সিংক এর পাশে
রেখে এসেছে। ময়না ভাই যখন কিচেনে রান্না করছিলো তখন যে মদের অর্ডার দিয়েছে সেগুলি
রাশেদ সাহেবই দিতে পেরেছে, দিয়ে আবার বিলে হিশাব টুকে রেখেছে। কাস্টমার চলে গেলে ময়না
ভাই যে ভাবে দেখিয়ে দিয়েছে সেই ভাবে আবার টেবিল পরিষ্কার করে সেট করে রেখেছে।
রেস্টুরেন্ট
বন্ধ করে বাসায় যাবার পথে দেলুকে বললো ভাই আপনারা যান আমি একটু ফোন করে আসছি। -হ্যালো, মনির কণ্ঠ।
-হ্যাঁ
মনি আমি।
-কি
ব্যাপার,
কত দিন
হয়ে গেছে তুমি ফোন করনা আমি চিন্তায় অস্থির, কেমন আছ তুমি?
-না
মনি তোমার চিন্তার কোন কারণ নেই আমি ভালো আছি। আমি অক্সফোর্ড থেকে আজ স্কটল্যান্ডে
চলে এসেছি।
-কেন?
-এখানে
সামনে কাজ পেয়েছি, আজ
প্রথম দিন এখানে কাজ করলাম, খুব ভালো লেগেছে, ওখানকার মত না, বেশ সহজ কাজ।
-যাক
বাঁচলাম,
আমি শুধু
আল্লা আল্লা করছি আমার পাগলকে একটু দেখ আল্লা।
-হ্যাঁ
মনি আল্লা তোমার কথা শুনেছে আমিও বেঁচেছি। মনি, কি যে কষ্ট ওই কাজে, আচ্ছা, ছোটনের পরীক্ষার কি
খবর?
-হ্যাঁ
ও পাশ করেছে,
আর মাঝুর
ইয়ার ফাইনাল সামনে শুরু হবে, পড়াশুনা করছে।
-তা
হলে মনি এখন রাখি, দেখি
এখানে লাইবেরি কোথায়, পেলে
মেইল পাঠাবো,
খোদা হাফেজ।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।