১৫৬।
পরের
ছুটির আগের রাতে সমসু ভাইকে বলে রাখল আমি কাল লন্ডন যাব পরশু চলে আসবো।
-হঠাৎ
করে আবার লন্ডন কেন?
-একটু
কাজ আছে।
-আচ্ছা
ঠিক আছে যা্বেন।
রাতের
ডিউটি শেষ করে তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে শীতের কাপর গায়ে দিয়ে রাত ১টায় বের হয়ে গেল।
মাত্র মিনিট দশেক হাঁটা পথ। এত রাতে কোন কাউন্টার খোলা নেই। ট্রেনেই টিকেট করতে
হবে।
গাড়ির শিডিউল লেখা মনিটরে দেখল একটা ত্রিশ মিনিটে সোয়ান সী থেকে প্যাডিংটনের ট্রেন
আসছে। দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বসে রইলো। বেশ শীত পড়েছে একটু
চা বা কফি হলে মন্দ হতো না কিন্তু এত রাত বলে ছোট্ট ব্রীজেন্ড স্টেশনের টি শপটাও
বন্ধ এখন ট্রেনে না উঠলে আর কোন চা কফি পাবে না। পকেট থেকে এরিনমোর টোব্যাকোর
প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট বানিয়ে জ্বালালেন কিন্তু প্রচণ্ড শীতের জন্য কোন হাত
গ্লোভসের বাইরে বেশি ক্ষণ রাখতে পারছে না। তবুও কোন ভাবে সিগারেটটা শেষ হবার আগেই
পশ্চিম দিক থেকে একটা তীব্র আলো এদিকে এগিয়ে আসতে দেখলেন। সামনের ঘড়িতে দেখলেন
দেড়টা বাজতে চলেছে মানে ট্রেন আসছে। উঠে দাঁড়ালেন, সাথে কোন ব্যাগ নেই শুধু এক
বোতল পানি। নিয়ম মেনে ট্রেনটা এসে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উঠে সোজা বুফে কারে গিয়ে
একটা কাল কফির অর্ডার দিয়ে পকেট থেকে খুচরা দুই পাউন্ড বের করে দিয়ে একটু
দাঁড়ালেন। ভিতরে হিটার চলছে বেশ আরাম লাগছে এখন। রাত জাগা দোকানি একটু পরেই কাগজের
কফির কাপ এগিয়ে দিল আর সেটা নিয়ে এসে একটা সিট দেখে বসে পরলেন। পাশে
কোন যাত্রী নেই। ভালই হলো কফিটা শেষ হলে কাপটা সামনের সিটের ব্যাক পকেটে রেখে চোখ বন্ধ
করে বসে রই্লেন।
ভোর
পাঁচটায় লন্ডন প্যাডিংটন স্টেশনে পৌছার কথা। সামনে একটা স্টেশন মনে হচ্ছে। জানালা
দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন। একটু পড়ে নিউ-পোর্ট স্টেশনে ট্রেন থামল। সম্ভবত এত রাত
বলে কোন যাত্রী দেখা গেল না। ট্রেন ছেড়ে দিল। এবার একটু চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে
বসে সামনে কি হতে যাচ্ছে তাই ভাবতে শুরু করলেন।
নাহিদ
বলেছে মেয়েকে পাঠাবে কিন্তু ওর ব্যাংক গ্যারান্টি, টিকেটের টাকা তারপরে সাথে নিয়ে
আসার টাকা এগুলি কি ভাবে কি করবে এসব কিছু বললো না। তাইতো, এগুলি কি ভাবে যোগার হবে? কি জানি কোন কূল কিনারা পেলেন না।
হয়ত নাহিদ কিছু ব্যবস্থা করেছে নয়ত বলত। দেখা যাক কি করে! রাশেদ সাহেবের পক্ষে এই
এত টাকার যোগার করা সম্ভব নয়। তাহলে? এই সব নানা কিছু ভাবতে ভাবতে ব্রিস্টল ছাড়িয়ে সামনে রেডিং এসে
গাড়ি একেবারে থেমে গেল। এই যাহ্! এখানে কতক্ষণ লেট হবে কে জানে!
যাক এক দিক দিয়ে ভালই হলো প্যাডিংটনে অত ভোরে থামার চেয়ে একটু লেট করে আটটার দিকে
পৌঁছালেই ভাল নয়ত স্টেশনে বসে থাকতে হবে।
সত্যি
সত্যিই ট্রেন রেডিং এ প্রায় তিন ঘণ্টা লেট করে সকাল আটটার দিকে প্যাডিংটন এসে
পৌঁছল। রাশেদ সাহেব মনে মনে ট্রেন ড্রাইভারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রেন থেকে নেমে
স্টেশনের পূব দিকের গেট দিয়ে বের হয়ে প্রথমে বাম পাশের দোকান থেকে একটা ছোট
স্যান্ডউইচ,
একটা
বার্গার আর এক ক্যান ডায়েট কোক নিয়ে এক পাশে বসে সকালের নাশতা সেরে নিলেন। রাতে
জেগে এসেছে বলে বেশ ক্ষুধা লেগেছিল। নাশতা খেয়ে একটু হেঁটে টিউব স্টেশনে গিয়ে জোন
এক এবং দুইয়ের একটা ডে টিকেট নিয়ে পেডিংটন থেকে হেমারস্মিথ লাইনে মুর গেট এসে আবার
নর্দার্ন লাইনের ট্রেনে উঠে একটু পরে বারা স্টেশনে নেমে নাহিদের দেয়া ঠিকানা এবং
পকেটের গুগল ম্যাপ
বের করে কলেজের অবস্থান দেখে হাঁটতেহাঁটতে কলেজে চলে এলেন। একটু
খুঁজে যেখানে ওভার সিজ স্টুডেন্টদের ভর্তির ফরম দেয় ওই কাউন্টারে ত্রিনিদাদ এর এক
মেয়ে বসে ছিল তার সাথে আলাপ করে খুঁটিনাটি কিছু জেনে নিয়ে একটা ফরম চেয়ে
নিলেন। আজকের মত কাজ শেষ। মাত্র সাড়ে দশটা বাজে এখনই চলে যেতে পারে
কিন্তু এত দূরে এসে ফিরোজের সাথে দেখা করে না গেলে হয়না। বাসায় ফোন করে ভাবীকে
পেয়ে জানিয়ে দিলেন, -ভাবী
আমি লন্ডন এসেছি একটু পরেই আসছি।
-আচ্ছা
ভাই আসেন।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।