১৫৭।
বাসায়
পৌঁছে ফিরোজের সাথে আলাপ হলো। কি জন্যে হঠাৎ এখানে এসেছে তা শুনেফিরোজ
এবং ভাবী খুশি হলো। ফিরোজ অনেক কিছু জানাল।
-নাহিদ
এই এতদিনে একটা ভাল কাজ করেছে।
-তাই
নাকি?
-অবশ্যই, ও এখানে এলে ওর খরচ ও
নিজেই যোগার করে নিতে পারবে, কয়টা বাঙালি ছাত্রছাত্রী বাবার পয়সায় এখানে পড়ে? সবাই নিজেরটা নিজেই
ব্যবস্থা করে নেয়।
-কি
জানি ফিরোজ আমার কিন্তু ভয় করছে, ও পারবে কি না।
-আরে
ভয় পাচ্ছ কেন ভালটা আশা কর।
-হ্যাঁ, ভালটাই আশা করছি বলে
নাহিদ বলার সাথে সাথেই চলে এসেছি।
দুপুর
পর্যন্ত গল্প সল্প করে দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লেন। প্যাডিংটন
এসে সন্ধ্যা
ছয়টার ট্রেন ধরে ব্রীজেন্ড পৌঁছলেন রাত দশটায়।
পরদিন
সকালে পোস্ট অফিসে গিয়ে ফরমটা পোস্ট করে আবার লাইবেরিতে গিয়ে ত্রিনিদাদের ওই মেয়ে
লিজ এবং ফিরোজের কাছে যা যা শুনে এসেছে সেগুলি মেইলে লিখে ছোট ভাই নাহিদ এবং বড় মেয়ে
তিথিকে পাঠিয়ে দিলেন। রাশেদ সাহেব শুধু ছোট ভাই বলেছে বলে তার কথা রাখার জন্য
এই কাজটা করলেন কিন্তু সে মনে মনে ভেবে রেখেছে, একি আর হবে! ব্রিটেনের ভিসা পাওয়া
কি আর এতই সহজ! দেখা যাক কি হয়।
আগের
মতই দিন গুলি চলে যাচ্ছিল। একদিন মেইল চেক করে দেখল ওই কলেজে তিথির ভর্তির অফার
লেটার এসেছে। অফার লেটারটা স্ক্যান করে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার মানে আবার লন্ডন যেয়ে
ভর্তির প্রক্রিয়া সেরে আসতে হবে। না এবারে আবার একশ পাউন্ড খরচ করে আমি যাব না।
কাগজ পত্র যা আসে সেগুলি ফিরোজকে পাঠিয়ে দিব ওই ভর্তি করে দরকারি কাগজ পত্র ঢাকায়
পাঠিয়ে দিবে। অফার লেটারের একটা কপি প্রিন্ট করে নিয়ে এসে ফিরোজের সাথে ফোনে কথা
বলে ওর কাছে ডাকে পাঠিয়ে দিলেন। ফিরোজ বলেছে এটা পেলেই ও কলেজে যাবে। ভর্তি
হতে এক হাজার
একশ পাউন্ড লাগবে ওই টাকাও আপাতত ফিরোজ দিয়ে দিবে পরে ওকে দিয়ে দিলেই হবে।
দশ বারো
দিনের মধ্যে ভর্তি, ঢাকায়
কাগজ পত্র পাওয়া এবং ভিসার জন্য রেডি হওয়ার কাজ হয়ে গেল। কাগজ পত্র সব ডিএইচএল এ
পাঠান হয়েছে বলে এত তাড়াতাড়ি করতে পেরেছে। সপ্তাহ খানিক পড়ে তিথি ভিসার জন্য
এপ্লাই করবে বলে বাবাকে জানাল। যেদিন তিথি ব্রিটিশ হাই কমিশনে যাবে সেদিন সকাল
থেকেই রাশেদ সাহেবের মনে আশা নিরাশার একটা দোদুল্যমান অবস্থা বিরাজ করছে। এমন সময়ে
কাছের কেও থাকলে তার সাথে আলাপ করতে পারলে অনেকটা বোঝা কমে যায় কিন্তু আলাপ করার
মত কেও নেই। একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছেন।
১৫৮।
দুপুরের
ডিউটি শেষ করে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে খাবার জন্য কিচেনে এসে মাত্র প্লেট হাতে
নিয়েছে এমন সময় বার এর টেলিফোন বেজে উঠল। প্লেট রেখে দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরলেন। -হ্যালো!
-আব্বু? তিথির কণ্ঠ।
-হ্যাঁ
আব্বু আমি,
বল।
-আব্বু, আমার ভিসা হয়েছে।
-তাই
নাকি?
-হ্যাঁ
আব্বু, কোন স্কুল কলেজে
পড়াশুনা করেছি এগুলি জিজ্ঞেস করে বললো তোমাকে আমাদের ভাল লেগেছে তাই তোমাকে ভিসা
দিয়ে দিলাম আশা করি তুমি কোর্স কমপ্লিট করে দেশে ফিরে আসবে।
-বেশ
ভাল হয়েছে আব্বু, আমি
কোন কাজে মন বসাতে পারছিলাম না চিন্তায় ছিলাম। এখন
ফ্লাইট বুকিং দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আস।
-হ্যাঁ
ছোট কাকু আর আমি এখন মতিঝিলে এক ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে।
-কোন
লাইনে বুকিং দিয়েছ?
-ব্রিটিশ
এয়ারে, কাকু বললো এটার কোন
ট্রানজিট নেই তাই।
-বেশ
ভাল করেছ,
তোমার মা
জানে?
-হ্যাঁ
ওখান থেকে বের হয়েই আম্মুকে ফোন করেছি।
-ডেট
ঠিক করে আমাকে ফ্লাইট শিডিউল জানিয়ে মেইল দিও আমি হিথরোতে থাকব। আচ্ছা তাহলে এখন
রাখি আব্বু।
-আচ্ছা।
রিসিভার
নামিয়ে রাখার সাথে সাথেই আবার রিং,
-হ্যালো।
-রাশেদ
ভাই আমি নাসির।
-কি
খবর নাসির,
বল কেমন
আছ।
-ভাল
রাশেদ ভাই,
আমার
ভিসা হয়েছে।
তাই
নাকি? বেশ ভাল হয়েছে। ওদিকে
তিথির ভিসাও হয়েছে। দেখ না তোমরা এক সাথে আসতে পার কিনা
-ওর
থাকার ব্যবস্থা হয়েছে?
-না, এখনও হয়নি, আসলে এখনও খুঁজেই
দেখিনি।
-আগে
ওর থাকার ব্যবস্থা হলে পরে ওর যাবার টিকেট করতে বলেন।
-হ্যাঁ
ঠিক বলেছ।
-দেখি
ফিরোজ আর নাহিদের বন্ধু তানিমকে বলব ওর থাকার ব্যবস্থা করতে। কোথাও কিছু না হলে
আপাতত -ফিরোজের ওখানে উঠতে পারবে, ভাবী বলেছে।
-আচ্ছা
তাই করেন,
দেরি করা
ঠিক হবে না।
-হ্যাঁ, আজ এখনই ফোন করব।
-তুমি
কবে আসছ?
-দেখি, আমি ইন্ডিয়ান এয়ারে
আসব, এটাতে টিকেটের দাম কম।
-আচ্ছা
আস, আমি সমসু ভাইকে বলব আজ
ফোন
রেখে দুপুরের খাবার খেয়ে ফিরোজ, তানিমকে ফোন করলেন তিথির থাকার ব্যবস্থা করার জন্য।
তানিম বললো
-চিন্তা করবেন না রাশেদ ভাই আমি আমার মিসেসকেও বলব খোজ খবর করতে।-আচ্ছা যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখ। থাকার ব্যবস্থা হলেই ওর টিকেট করতে বলব।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।