১৫৯।
দুই তিন দিন পরে মেইলে দেখে নাসির জানিয়েছে সে সামনের রবিবারে আসছে। সমসু
ভাইকে আগেই বলে রেখেছিল আজ সন্ধ্যার ডিউটিতে সবাই যখন একত্র হলো তখন বললো সামনের রবিবারে
নাসির আসছে।
সবাই
সংবাদটা জেনে বেশ উৎফুল্ল হলো।
-বেশ
ভাল কথা দাদা আমাদের এখানেই থাকবে বলে দিয়েন।
-হ্যাঁ
আমি তাই বলেছি,
তুমি
আসলে এখানেই থাকতে পারবে।
এর পরে বাহাদুরের
কাছে ফোন করে ওকেও জানিয়ে দিল সুখবর।আবার রাশেদ সাহেবের মন একটু একটু করে উজ্জীবিত
হচ্ছে। গতকাল ছুটির দিনে গফুর ভাইয়ের টেকএওয়েতে গিয়ে অনেকক্ষণ বসেছিল। গফুর ভাইয়ের
বিলাত আসার পিছনের গল্পও শোনাল। গ্রিস থেকে কি করে এখানে এসেছিল। এখানে এসেই বা
সুবিধা বা অসুবিধা কি পেয়েছে। তার সেফ হবার কাহিনী শোনাল। এর
পরে কি খাবে বারবার জিজ্ঞেস করল। লজ্জায় রাশেদ সাহেব কিছু বলতে পারছিলেন না কিন্তু
অনেকদিন থেকেই তার বাংলাদেশের মোগলাই ঘরানার বিরিয়ানি যেমনটা বাড়িতে খেত ওই
বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গফুর ভাইয়ের পিড়াপিড়িতে মুখ ফুটে বলেই
ফেললেন।
-গফুর
ভাই আপনি কি আমাদের দেশে যে বিরিয়ানি করে তেমন করে রাঁধতে পারেন?
-দেশের
বিরিয়ানি খাবেন?
কি দিয়ে
খাবেন আজই যদি খেতে চান তাহলে ভেড়ার মাংস দিয়ে রান্না করব আর যদি দুই তিন দিন
অপেক্ষা করেন তাহলে সোয়ান সি থেকে ছাগলের মাংস এনে রান্না করব।
।না, গফুর ভাই আজই করেন
ভেড়া আর ছাগলের তেমন তফাত আমি কিছু বুঝি না। তাছাড়া আমার অনেকদিন থেকেই ইচ্ছে
হচ্ছে কিন্তু কোথায় পাব, নিজে তো পারি না তাই চেপে রেখেছিলাম আজ আপনার এত
চাপাচাপিতে বলেই ফেললাম।
-আচ্ছা
তাহলে আজ তাই করব, রাতে
এখানেই খাবেন। যখন যা খেতে ইচ্ছা হয় আমাকে বলবেন।
-আচ্ছা
গফুর ভাই।
মেইল
খুলে দেখল নাসিরের প্লেন সন্ধ্যা ছয়টায় ল্যান্ড করবে। তাহলে ইমিগ্রেশন, লাগেজ খুঁজে পাওয়া
ইত্যাদি সেরে বের হতে আটটা তারপরে হিথরো থেকে সোয়ান সির কোচে ব্রীজেন্ড চার ঘণ্টা
মানে রাত প্রায় বারটার আগে আসতে পারছে না।রাত সাড়ে বারোটার দিকে রাশেদ সাহেবের
মোবাইল বেজে উঠল, নাসিরের
আগের নম্বর।
-হ্যালো
নাসির, তুমি কোথায়?
-রাশেদ
ভাই আমি ওডিওন সিনেমা হলের কাছে, সোয়ান সির গাড়িতে এসেছি, এখানে নামিয়ে দিয়ে গেল আমি
ভেবেছিলাম ব্রীজেন্ড পুলিশ স্টেশনের সামনে নামাবে তাই আগে কল দিইনি।
-আচ্ছা
একটু দাঁড়াও আমি আসিয়াদ ভাইকে বলছি।
-আসিয়াদ
ভাই সামনেই ছিল। তাকে বললো ভাই একটু ওডিওন হলে চলেন নাসির এসেছে ওকে নিয়ে আসি। -চলেন দাদা।
দশ
মিনিটের মধ্যে ওডিওন হলের সামনে এসে নাসিরকে দেখে ওর পাশে গাড়ি থামিয়ে মাল পত্র উঠিয়ে
আবার রেস্টুরেন্টে ফিরে এলেন। সবার সাথে কুশল বিনিময়, দেশের কি অবস্থা, কে কেমন আছে ইত্যাদিতে
কেটে গেল আরও ঘণ্টা খানিক তারপরে সমসু ভাইয়েরা চলে গেল। নাসির খাওয়াদাওয়া করতে
করতে আরও প্রায় আধা ঘণ্টা পরে উপরে রুমে গেল।
-এবার
বল নাসির তোমার দেশের কি খবরাখবর।
-এইতো
আমি ফোনে বলেছিলাম যে আমিনাদের সবাইকে নিয়ে আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম।
-হ্যাঁ
বলেছিলে।
-তখন
টেলিফোনে সব কিছু খুলে বলতে পারিনি।
-আচ্ছা
এখন বল
-তাই
বলছি, ভাবী অনেক কিছু
জিজ্ঞেস করতে চাইছিল আমি তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছিলাম, আপনি যা যা নিষেধ করেছিলেন সেগুলি
আমি সব বলে দিয়েছি এবং বুঝতে পারলাম তার কাছে লুকবার মত সুযোগ নেই। সে সবই বুঝতে
পারছিল।
-কি
দরকার ছিল সব বলার?
-রাশেদ
ভাই আপনার স্ত্রী ভাগ্য খুবই ভাল, আপনি অনেক ভাল একজন স্ত্রী পেয়েছেন। ভাবী একজন অসাধারণ
মহিলা। তার চেহারার মধ্যেই একটা কিছু আছে যা দেখেই বোঝা যায় তিনি অনেক উঁচু স্তরের
মানুষ কাজেই তার কাছে আপনি কি লুকাবেন? সে সবই বুঝতে পেরেছিল, আমি বলার আগেই। আমি সাহস করে
মিথ্যা বলতে পারিনি।
-ভালই
করেছ নাসির।
-আপনি
কি ডিউটি করেন,
কিভাবে
থাকেন, কিভাবে খাওয়া দাওয়া
করেন অবসর সময়ে কি করেন সব খুলে বলেছি।
-সে
এসব শুনে কি বললো?
-কিছুই
বলেনি, শুধু মাথা নিচু করে সব
মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। একটা কথাও বলেনি। আমার বলা শেষ হলে আমাকে শুধু বলেছে আমি
এগুলি জানি,
জানি
মানে আমার মনে হয়েছে। ও কোনদিন আমার কাছে কিছু লুকায়নি কিন্তু এবারে এই কথাগুলিই
শুধু লুকবার চেষ্টা করেছে।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।