২৫২।
কয়েকদিন এভাবে বেশ আনন্দেই কেটে গেল। একদিন রাশেদ সাহেব মনিকে
বললেন-
-আচ্ছা এখন কি করা যায় বলত, কাওকে
চিনি না আর যারা চেনা ছিল তাদের সাথে অনেক দূরত্ব হয়ে গেছে কোন
যোগাযোগ নেই যে
কাজের কথা বলব।
-যাক না আরও কিছুদিন, এত ভাবছ কেন? আমি কি
কিছুই রাখিনি ভেবেছ? আরতাছাড়ামাঝু, ছোটনএরাতোমাকেকিছুকরতেদিবেনাবলেছে।
-কি রেখেছ? কই, তুমি কি কোনদিন
কিছু বলেছ?
-বলিনি, ভেবেছি তুমি এলেই
জানবে, আবার তিথি বলেছে রাজীব ওকে আমাকে বলার জন্য বলেছে যে
আব্বা আসলে যেন চাকরি বাকরি কিছু খুঁজে না, আমি
চাকরি করছি, আব্বার আর কি দরকার? মানুষটা
অনেক কষ্ট করেছে সারা জীবন এবার একটু বিশ্রাম নিতে দাও
শুনে এমন জামাইর কথা ভেবে মনটা খুশিতে ভরে গেল, মন
প্রাণ জুড়িয়ে গেল। তার ছেলে নেই তো কি হয়েছে এরাই আমার ছেলে।
কিন্তু..........................................
মনে একটা কিন্তুর জন্ম হলো।
-না মনি, তা কি করে হয়? শেষ
পর্যন্ত জামাই আমাদের খাওয়াবে? এটা কি তুমি মেনে
নিতে বলছ?
-না আমি কিছু বলিনি, বলেছি দেখা যাক আগে
তোমার বাবা আসুক তখন দেখব, তুমি এত ভাবছ কেন?
যাকনাকিছুদিন!
-ভালই বলেছ। তবুও দেখি আমি কিছু পেলে নিশ্চয়ই করব।
-তুমি আগেই এত ভেবো না, কিছুদিন তো যাবে, এত দিন
তুমি বিশ্রাম কর, নিশ্চিন্তায় থাক সময় হলে দেখা যাবে। আর তুমি
যে এত ব্যস্ত হয়েছ তুমি কি একা কোথাও যেতে পারবে? তুমি
যেখানে যেতে চাইছ মেয়েরা কেও তোমার সাথে যাচ্ছে কাজেই কোথায় না কোথায় অফিস হবে আর
তুমি কি একা যেতে পারবে? মেয়েরা তোমাকে একা
যেতে দিবে? দেশের অবস্থা, ঢাকা শহরের অবস্থা
দেখছ না কেমন বদলে গেছে। কিছুদিন থাক দেখ, অবস্থা
বুঝে নাও তারপরে দেখব কি করবে।
-তা ভালই বলেছ পথে ঘাটে দেখছি অসম্ভব ভিড় আগে ঢাকায় এত মানুষ ছিল
না কিন্তু ঘরে বসে বসে যে সময় কাটতে চাইছে না।
-সময় কাটবে না কেন, তুমি আমার কাছে বসে
থাকবে, তাতে হবে না?
-তা হবে না কেন, আমি তো তাই চাই
কিন্তু..................
-কিন্তু আবার কি? তাহলে কি কোথাও
বেড়াতে যাবে? চল নতুন বেয়াইনের সাথে দেখা করে আসি বেয়াইন সাহেবা সেদিন
ফোনে বলেছে বেয়াই সাহেব একটু স্থির হলে তাকে নিয়ে আসেন।
-হ্যাঁ তাই চল, আমাকেও তো বললো, আমাদের
প্রথম বেয়াইন ওখানে এমনিও যেতে হবে।
২৫৩।
বেয়াই বাড়ি থেকে ফিরে এসে কয়েকদিন পরে গ্রামে গেলেন। শ্যালক বৌ শারমিন শুধু ফোন করছে,
-আপা, দুলাভাইকে নিয়ে আসবেন না? তাড়াতাড়ি
আসেন, বর্ষার পানি শুকিয়ে গেলে এখানে ভাল লাগবে না। ছোট শ্যালক এমরান গ্রামেই
থাকে। লেখাপড়ার পাট শেষ করে চাকরি বাকরি না খুঁজে বাবার রেখে যাওয়া জমিতে আধুনিক
উপায়ে চাষ বাস করে। বৌটাও পেয়েছে তেমনি। শিক্ষিত মেয়ে অথচ শহরে থাকতে চায় না।
রাশেদ সাহেব যাবার পর বিয়ে হয়েছে। নতুন বৌয়ের সাথে ফোনে অনেক কথা হয়েছে। মোটামুটি
তারই ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টায় ওরা গ্রামেই থাকছে। বাড়িতে শহরের সব ব্যবস্থা করে
নিয়েছে, পুকুরের পানি মটর দিয়ে সরাসরি বাথরুমে আসছে। পুকুরের মাছ, খোয়ারের
হাস মুরগি, জমির শাক সবজি থেকে শুরু করে ধান, গম, ভুট্টা, পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আদা
রসুন আর কি চাই? শহরের দূষণ আর হৈ হল্লার মধ্যে থাকতে ভাল লাগে না।
নিজেদের যা আছে তাতেই চলে যাবে। শুধু শুধু পরের গোলামি করবে কেন? নতুন
দুলাভাই এতদিন পরে আসছে বলে বিশাল আয়োজন করে রেখেছে। দুলাভাই প্রায় সপ্তাহ খানিক
ছিল, প্রতিদিন প্রতি বেলায় নতুন নতুন দেশি খাবার দিয়েছে। আপার কাছে আগেই জেনে নিয়েছিল দুলাভাই কি কি
পছন্দ করে। পিঠা পুলি এটা সেটা কিছু বাদ দেয়নি। খুবই বুদ্ধিমতী মেয়ে। ভাদ্র মাসের
ভরা থৈ থৈ পানি চারিদিকে। সাঁতরে গোসল করেছে, বিকেলে
নৌকা নিয়ে বেড়িয়েছে। খুবই আনন্দে কেটেছে।
২৫৪।
ঢাকায় ফিরে এসেছে কয়েক দিন হলো। এখন তো আর সময় কাটে না। রাশেদ সাহেব হাঁপিয়ে উঠেছেন।
-চল একবার মংলা যাই। কালাম সাহেব, মজিদ
সাহেব, ডাক্তার সাহেব সবাই বলছে।
সেদিন রাতেই মজিদ সাহেব এলো মংলা থেকে। মজিদ সাহেব রিটায়ার্ড করে
ওখানেই বাড়ি করে ওখানেই থাকে। সে নাছোড় বান্দা, সাথে
করে নিয়েই যাবে।
রাশেদ সাহেব মনির সাথে আলাপ করলেন।
-চল ঘুরেই আসি তাহলে।
মজিদ সাহেব দুইদিন থেকে পরদিন ওদের সাথে করে নিয়ে গেল।
মংলার সবার সাথে দেখা হলো অনেকদিন পরে। ঘনিষ্ঠ জনদের মধ্যে যারা
আছে তার পরামর্শ দিল কিছু একটা করেন নয়ত বসে বসে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। হ্যাঁ তাইতো
খুঁজছি। এমনি এক ঘনিষ্ঠ জন পারভেজ সাহেব বলে দিল আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনি ঢাকা
গিয়ে আরমান সাহেবের সাথে দেখা করবেন বাকি যা আছে আমি তাকে ফোনে বলে দিচ্ছি। ঢাকা
ফিরে এসে পারভেজ সাহেবের দেয়া নম্বরে ফোন করলে সে ভদ্রলোক বললো পারভেজ সাহেবের
সাথে আপনার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে আপনি পরশুদিন সকালে এক কপি সিভি নিয়ে আমার অফিসে
আসুন। দেখা হলো, কথা হলো। শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করলেন-
-আপনি কবে জয়েন করতে পারবেন?
-যেদিন বলেন।
-তাহলে সামনের মাসেই জয়েন করেন!
-হ্যাঁ করব।
রাশেদ সাহেব বেকারত্বের হাত থেকে আপাতত রেহাই পেলেন। আর সেই সাথে
মনি একটু নিশ্চিন্ত হলো।রাশেদ সাহেবও হাফ
ছেরে বাঁচলেন। মনি নিয়মিত সকালে ডেকে উঠিয়ে নাশতা খাইয়ে দেয়। অফিসের গাড়িতে
যাতায়াত করে এবং দুপুরে ওখানে খাবার দেয়। চা কফির ব্যবস্থাও আছে। বিশেষ করে
যাতায়াতের কথা ভেবে মনি একটু নিশ্চিন্ত হলো।
রাজীব মাঝুকে বলেছে তুমি সংসারের জন্য কোন চিন্তা করবে না ওটা আমার
উপরেই ছেড়ে দাও, আমি দেখছি। মোটা মুটি দিন কেটে যাচ্ছে। যূথী নানা জায়গায় এপ্লাই করছে স্কলারশিপ পেলে কোথাও চলে যাবে।
রাশেদ সাহেব বড় জামাইকে একদিন বলে দিল দেখ বাবা এখন আমার বয়স যাই হোক অনেকদিন
দেশের বাইরে থেকে দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে অনেক দূরে চলে গেছি, আমি এখন
আগের মত দেশের মতিগতি তেমন ভাল বুঝি না কাজেই এখন থেকে তুমিই ওদের গার্জেন। ওদের
ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার মনে করবে সে তুমিই করবে। রাজীব মাঝুর পছন্দের
ছেলে আহসান এর বাবা মায়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে পরামর্শ করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। বড়
জামাই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব তার হাতে নিয়ে নিয়েছে আর মাঝু মা বাবার হাত খরচ
চালাচ্ছে ওষুধ পত্র কিনে দিচ্ছে। মেঝ জামাই আহসানও ভাল চাকরি করে, বড় একটা
কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে মোটামুটি ভাল পদে আছে। মেঝ জামাইও বাবা
মায়ের দিকে বেশ যত্ন নিচ্ছে। বিয়ের পরে মাঝু মিরপুরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকে। দিনগুলি বেশ চলে যাচ্ছে।
এভাবে প্রায় বছর দুয়েক পরে কোম্পানির যে প্রোজেক্টে রাশেদ সাহেবকে চাকরিটা দিয়েছিল
সে প্রজেক্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানি ওটা বন্ধ করে দিল আর আরমান সাহেব যিনি তাকে
চাকরিটা দিয়েছিলেন তিনিও রাশেদ সাহেব জয়েন করার পরের বছরেই অন্য একটা কোম্পানিতে
চলে গেছে। এমন অবস্থায় কোম্পানির আর কাওকে তার ব্যাপারে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান
রাশেদ সাহেবের পক্ষে সম্ভব নয় তাই রাশেদ সাহেব আবার বেকার হয়ে গেলেন। তার আর কিছু
করার নেই বলে নিয়তির সিদ্ধান্তই মেনে নিলেন। রাশেদ সাহেবের চাকরির মেয়াদ শেষ হবার
আগেই যূথী একটা স্কলারশিপ পেয়ে কানাডায় চলে গেছে। যাবার আগে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে
কেঁদেকেটে আর কোন চাকরি না করার জন্য বলে গেছে।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।