১৭০।
সেদিন
খাবার পাট সেরে রাস্তার ও পাশে ইস্ট লন্ডন জামে মসজিদ দেখাল আর একটু এগিয়ে রয়াল হাসপাতাল
দেখাল। এখান দিয়ে রাস্তা পার হয়ে একটু বাম দিকে বার্কলেজ ব্যাংক এ নিয়ে গেল একটা
একাউন্ট করার জন্য।
রিসিপসনে যে ছিল সে ওদের সামনের এক জন বয়স্ক বাঙ্গালির সাথে
বাংলাদেশের সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। ওরা তার পিছনে দাঁড়াল। সামনের বয়স্ক
ভদ্রলোকের কাজ হয়ে
গেলে
ওরা এগিয়ে বাংলায় বললো আমরা একাউন্ট করতে চাই। ওদের কথা শুনে সে কিছু বোঝেনি এমন
একটা ভাব করে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল কি বললে?
আবার
বাংলায় বললো আমরা একটা স্টুডেন্ট একাউন্ট করতে চাই
এবারও
সে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, কি বললে?
আপনি এই
একটু আগে ওই ভদ্র লোকের সাথে বাংলায় কথা বলছিলেন আর এখন আমার কথা বুঝতে পারছেন না?
সে আবার
ইংরেজিতে বললো,
কি বললে?
বুঝল
ইনি এক মাত্র আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া শুদ্ধ বাংলা জানে না কিংবা বাঙ্গালি বলে পরিচয়
দিতে লজ্জা পান তাই তখন বাধ্য হয়ে ইংরেজিতেই বললো । শুনে
ইংরেজিতেবললো-
-এখানে
আমরা স্টুডেন্ট একাউন্ট করি না, আপনারা অন লাইনে স্টুডেন্ট একাউন্ট করুন।
এমনিই
এর উপর কিছুটা রাগ মেশানো বিরক্তি ভাব এসেছিল তাই আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে
ওর সামনে থেকে চলে গেল। আবার কাছাকাছি কোন ব্যাংক আছে দেখতে হবে, খুঁজে লয়েডস ব্যাংক
পেল রাস্তার ওপাড়ে। এখানে এসে জানাল। এরা আবার বলছে ঠিকানার প্রমাণ লাগবে।
-এ
এসেছে মাত্র গত পরশু সে এটা কি ভাবে দিবে? এই তো কলেজ থেকে যে চিঠি দিয়েছে
ওতে তার স্থানীয় এবং স্থায়ী দুই ঠিকানা দেয়া আছে।
-না এতে
হবে না।
-কি হলে
হবে?
-ওর
নামে বাসার যে কোন বিলের একটা কপি হলেই হবে।
-আচ্ছা
আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে যে এক জন মানুষ যে দেশে ছিল না সে কি করে এই বিল দেখাবে? তা হলে কি বলতে চাও ও
এখানে আসার আগে ওর নামে বাসা করে রাখা উচিত?
-দেখ এ
কথার জবাব আমি দিতে পারব না কারণ আমাদের যে নিয়ম আমি তোমাকে তাই বলে দিলাম।
এ কথা
বলে একাউন্ট করার নিয়ম সংক্রান্ত ছাপান একটা কাগজ দিয়ে বললো দেখ এটা পড়লেই জানতে
পারবে কি কি দেখাতে হবে।
কাগজটা
নিয়ে পড়ে দেখল ও লোক যা বলেছে তাই লেখা। বেশ হবে না যখন তা হলে আর কি। বের হয়ে
পাশের এইচএসবিসি ব্যাংক এ গেল ওখানেও ওই একই কথা। সেদিনের মত আর একাউন্ট করা হলো
না, ব্যাংক থেকে বের হয়ে
গেল।
মেয়েকে
জিজ্ঞেস করল -এখন কি আরও কিছুক্ষণ ঘুরে দেখবে না কি বাসায় যাবে?
-না
আব্বু আজ আর পারছি না, খুব
টায়ার্ড লাগছে,
বাসায়
চল। তুমি তো কাল আছ কাল আবার বের হব।
-বেশ চল, এখানে রিকশা নেই যে এই
রিকশা চল বলে লাফ দিয়ে উঠে পরবে, এখানে একটু হাঁটতে হবেই। আজ একটু হেঁটেছ বলে এমন টায়ার্ড
লাগছে।
১৭১।
বাসায়
ফিরে নিচে থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখে খুকু কাঁদছে ভিতর থেকে থর থর করে কাঁপছে।
কিন্তু চোখে কোন পানি নেই। হঠাৎ করে যখন এই দৃশ্য নজরে এলো জিজ্ঞেস করল–
-কি
ব্যাপার আব্বু কি হয়েছে এমন কাঁদছ কেন?
কোন কথা
নেই। আবার বুকে নিয়ে জিজ্ঞেস করল। এবার আর স্থির থাকতে পারল না। বললো-
-তোমার
কি কালই যেতে হবে?
এমন
করুন সুর শুনে কোন বাবাই মনে হয় স্থির থাকতে পারে না। বিশেষ করে এমন এই নির্বান্ধব
প্রবাসে। মনটা খুকুর মতই কেঁপে উঠল। মেয়ের এই প্রশ্নের জবাবে
রাশেদ সাহেব কি বলবে? বলার মত কোন ভাষা মুখে আসছে না। ও যে ভাবে কাঁদতে পারছে সে
বাবা হয়ে সেভাবে কাঁদতে পারছে না। কিন্তু তার মন ক্ষত বিক্ষত হয়ে চৌচির হয়ে
যাচ্ছে। ও তো বাবার বুকে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে পৃথিবীর নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে
রয়েছে কিন্তু রাশেদ সাহেব কোথায় লুকবে?কোথায় আশ্রয় পাবে? অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললো -দেখি
আমার মালিককে ফোন করে দেখি। যদি ওরা আরও দুই এক দিন ছুটি দেয় তা হলে না হয় থেকে
যাব। কিন্তু আব্বু আজ হোক কাল হোক আমাকে যে যেতেই হবে। তুমি নিজেকে শক্ত কর। একাই
থাকবে এমন করে নিজেকে প্রস্তুত করে নাও।
তখনই সমসু
ভাইকে ফোন করল। বুঝিয়ে বললো সব কিছু। শুনে সে একটু আমতা আমতা করে নিতান্ত অনিচ্ছার
সাথে অনুমতি দিল। অনুমতি পেয়ে নাসিরকেও জানাল। নাসির বললো আপনি সব কিছু
বুঝিয়ে দিয়ে আসবেন। যাক বাবা আর না হয় দুই দিন তোমার সাথে থাকতে পারব।
কয়েক
দিন থেকে কিছু কেনা কাটা করে দিল। লন্ডনের পিকাডেলি সার্কাস, টেমস নদী, আর্ট গ্যালারী, পেডিংটন রেল স্টেশন সহ
কয়েক জায়গায় বেড়িয়ে ওর মনটাকে হালকা করে একা থাকার জন্য যত টুকু পারল শক্তি
যোগাবার চেষ্টা করল। দেখতে দেখতেই এ যাত্রায় লন্ডনে থাকার সময় ফুরিয়ে গেল। এবার
যাবার পালা। সারা রাত শুধু এপাশ ওপাশ করেই কেটে গেল। সম্ভবত শেষ রাতের দিকে
কিছুক্ষণের জন্য চোখ লেগে এসেছিল এমন সময় খুকুর বিছানা থেকে কেমন যেন একটা
ফোঁপানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। লক্ষ করে দেখল খুকু আবার কাঁদছে। উঠে খুকুর পাশে
শুয়ে ওকে বুকে নিয়ে আবার বোঝাবার চেষ্টা করল।
এমন করে
না বাবা। তুমি এখন থেকে একা থাকার মানসিকতা তৈরি কর। এমন হলে কেমন হবে বল? সময় পেলে তুমি আমার
ওখানে যাবে,
নতুন
দেশে বেড়াবে,
দেখবে। এই
তো জীবন। আমার সুযোগ হলে আমিও আসব।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।