২৩৩।
আহাদ চলে যাবার পরে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন। বাহ! সামনে নীল সমুদ্র, পাড়ে
ঢেউ আছড়ে পড়ছে দেখতে চমৎকার লাগছে। কিনারা থেকে একটু উপরে এসে বেশ কিছুটা জঙ্গলের
মত তারপরে রাস্তা আর রাস্তা পার হলেই এই
আবাসিক এলাকা। এত সুন্দর জায়গায় ও থাকছে
এই তিনদিন যাবত! অবাক হলো, এ কয়দিন দেখেনি কেন? ফিরে
আসার সময় লক্ষ করল ব্যালকনির পাশে একটা প্লাস্টিকের চেয়ার আর পাশে একটা এ্যাশট্রে
তার মানে আহাদও এখানে বসে সাগর দেখে। দেখবেই তো। খারাপ মন ভাল করার জন্য খোলা
সাগরের চেয়ে ভাল আর কোন ওষুধ আছে বলে জানা নেই। এমনিতেও সাগরের ব্যাপারে তার
দুর্বলতা আছে, প্রথম জীবন শুরু হয়েছে সাগরে। এই সাগর তাকে অনেক কিছু
দিয়েছে। অনেক ভাবতে শিখিয়েছে। ঘুরে আবার ওই চেয়ারে বসে চেয়ে রইলেন দূরের ওই সাগরে
ঢেউ যেখানে এসে সাদা ফেনা তুলে ভেঙ্গে পড়ছে সেই ঢেউ ছাড়িয়ে নীল দিগন্তের দিকে।
রুমে এসে তামাকের প্যাকেটটা নিয়ে আবার বসলেন। একটা বিড়ি বানিয়ে টানছেন আর
দেখছেন। এ দেখার কোন
শেষ নেই। এক ভাবে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকেও ক্লান্তি আসে না। সাগর কখনও কাওকে ক্লান্ত
হতে দেয় না। সাগরের একটা সম্মোহনী শক্তি আছে। সাগর শুধু মানুষকে কাছে টানে। যে একবার সাগরের মায়ায় বাঁধা পড়েছে
সাগর তাকে হাতছানি দিয়ে কাছে টানবেই। এখানে বসে দেখে মন ভরছে না, কাছে
যেতে হবে। সাগরের নোনা জলে পা না ভেজালে কি সাধ মিটে? যাই
কাছে যাই! সাত তলার উপরে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে রাস্তা দেখে নিলেন। গেট থেকে বের হয়ে ডানে যেতে হবে ওই যে বনের
মাঝে যে রাস্তাটা গেছে সম্ভবত ওটাই সাগর পাড়ে গেছে। কাপর বদলে ঘরে তালা দিয়ে লিফটে
নেমে এগিয়ে চললেন ব্যালকনি থেকে দেখা রাস্তা ধরে।
একটু হেঁটে দেখলেন সে যা ভেবেছে তাই। বনে ঢুকলেন, অধিকাংশই
বুশ উইলো গাছের বন। উইলো গাছের গন্ধে মনটা এমনি এমনিই উদাস হয়ে যায় তারপরে আবার
যদি কাছেই সাগরের নোনা জলের গন্ধ থাকে তাহলে তো কথাই নেই। বনটাকে যত ছোট মনে
করেছিল তার চেয়ে একটু বেশি প্রশস্ত। প্রায় পনের মিনিট লেগে গেল বের হতে। এর পরেই
সাগরে ঢেউয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে লাল বালির উপর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছেন। আশেপাশে গাংচিলদের ভিড়, কিচির
মিচির শব্দ করে কিছু উড়ছে কিছু বালিয়াড়িতে বসে আছে, চমৎকার
দৃশ্য। মনে হচ্ছে এখন ভাটা তাই পানি বেশ দূরে তবুও এগিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছুটা হেঁটে পানির কাছে
এসে জুতা খুলে হাতে নিয়ে সোজা এগিয়ে গেলেন পা ভেজাতে। পড়নের প্যান্ট গুটিয়ে
নিয়েছেন হাঁটু পর্যন্ত। আস্তে আস্তে হাঁটু পানিতে এসে দাঁড়ালেন। তাকিয়ে আছে ওই দূরের নীলিমা সীমান্তে। অনেক
দিনের পুরনো স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে এলো। সাগর পাড়ে নানা রঙের বাতি জ্বলে উঠেছে
এদিকে কোন খেয়াল নেই।
২৩৪।
পরদিন আহাদ বেরিয়ে যাবার পর এখানে এসে এই প্রথম ল্যাপটপ অন করলেন। আহাদের পিসি থেকে ইন্টারনেটের ওয়ারলেস কানেকশন পাচ্ছে, ইজিপশিয়ান
রেসিপি সার্চ দিয়ে মনের মত একটা পেজ পেয়ে কয়েকটা রেসিপি কপি করে ল্যাপটপটা কিচেনে
এনে টেবিলের এক পাশে রেখে গরুর মাংস, স্পিনাস, মশলা সব
বের করে রাখলেন। সব মশলাই আছে, ওদের
রেসিপিতে বিশেষ ভিন্ন কোন মশলা নেই। রুমে ফিরে গিয়ে ল্যান্ড ফোনে ফোন করে বললেন আজ
তোমাদের লাহমা বিল বাসাল (পিঁয়াজ দিয়ে গোমাংস), স্পিনাস
সুপ আর কুশেরি (চাল ডালের খিচুরির মত) রান্না করছি তাড়াতাড়ি চলে এসো।
অবিশ্বাসেরে স্বরে জিজ্ঞেস করল-
-কি বললে?
-যা শুনেছ তাই বলেছি।
-তুমি রান্না করবে?
-আর কে করবে বল, তোমার ঘরে এখন আমি
একাই আছি।
-আমার বিশ্বাস হচ্ছে না রাশেদ!
-আচ্ছা এখন বিশ্বাস না করলেও চলবে তবে তুমি তাড়াতাড়ি দেড়টার মধ্যে
চলে এসো
-আচ্ছা আচ্ছা, তুমি বললে আমি এখনই
আসতে পারি!
-না থাক এখন আসতে হবে না সময় মত আসলেই হবে।
ফোনটা রেখে রান্না ঘরে এসে রান্না শুরু করলেন। কোন তাড়া নেই তাই একে একে বেশ সময় নিয়ে
কম্পিউটারের পর্দায় যে ভাবে রেসিপি লেখা আছে হুবহু সেই ভাবে সব
রান্না করে ফেললেন। ঘড়িতে একটা
বেজে গেছে। এবার যাই গোসল করে আসি, শরীরে পিঁয়াজ মশলার গন্ধ হয়ে গেছে। গোসল
করে এসে এ কয়দিনের জমা কাপর মেশিনে দিয়ে রেডি হয়ে ব্যালকনিতে ওই চেয়ারে বসে সাগরের
দিকে চেয়ে রইলেন। গেট দিয়ে একটা
গাড়ি ঢোকার শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখলেন আহাদের গাড়ি। উঠে দরজা খুলে
দাঁড়িয়ে রইলেন। একটু পরেই লিফট
থেকে বের হয়ে রাশেদ সাহেবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠল।
-জানলে কি করে আমি এসেছি?
-কি যে বল, আমি রান্না করে, গোসল
করে কাপড়গুলা মেশিনে দিয়ে ব্যালকনিতে বসে ছিলাম গাড়ির শব্দ শুনে দেখি তোমার গাড়ি, তোমার
গাড়িতে আর কে আসবে? চল সব রেডি এবার টেবিলে বসি।
-চল।
টেবিলে এসে এক এক করে ঢাকনা খুলে ঘ্রাণ শুকে আহাদ অবাক হয়ে রাশেদ
সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
-আরে দেখছ কি নাও প্লেট নাও, শুরু
কর!
-নাও আগে তুমি নাও।
-না না আজকের রান্না তোমার জন্য তাই তুমি আগে নাও।
-আচ্ছা নিচ্ছি। আহাদ প্লেটে নিতে শুরু করল আর এই ফাঁকে রাশেদ সাহেব
ফ্রিজ থেকে একটা সফট ড্রিঙ্কস এর বোতল বের করে আনলেন।মুখে দিয়ে এবার আহাদের চমক লাগার পালা।
-একেবারে আমাদের সেফদের মত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এগুলা
তুমি করেছে!
-আচ্ছা কেমন লাগছে তাই বল।
-অসাধারণ, অবিশ্বাস্য!
-রাতেও কিন্তু এগুলাই খেতে হবে, চলবে? নাকি
অন্য কিছু করব?
-যদি থাকে তাহলে এতেই চলবে, কুশেরি
আমার ফেভারিট ডিস।
-ভেরি গুড! তাহলে তুমি বিয়ে করছ না কেন?
-এ কথা এখন বলা যাবে না পরে বলব।
-কোন সমস্যা?
-না না তেমন কিছু না এখন সময় হবে না তাই পরে বলব।
-বেশ তাহলে চল আমি এখন তমার সাথে বের হয়ে মার্কেট পর্যন্ত যাব
তারপরে বাসে করে কালকের মত ঘুরব।
-হ্যাঁ চল।
গাড়িতে বসে আহাদ বললো-
-তুমি পিপলস মুভারের বাসে উঠবে ওদের সার্ভিস খুব ভাল ভাড়াও কম, ডে
টিকেট নিয়ে নিবে তাহলে ওদের সার্ভিসের যে কোন বাসে সারাদিন ঘুরতে পারবে।
-হ্যাঁ আমি গতকাল তাই করেছিলাম তবে পিপলস মুভার চিনতাম না বলে
ডারবান ট্রান্সপোর্টের বাসে উঠেছিলাম।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।