২৩১।
বের হয়ে ফুটপাথ ধরে বাম দিকে হাটা শুরু করলেন। সত্যিই মিনিট দশেক হেঁটে দেখলেন সামনে
ট্রাফিক আইল্যান্ড এবং অনেক ব্যস্ত বিশাল চৌরাস্তা। অনেক গাড়ি যাতায়াত করছে। ডান
দিকে বাস স্টপেজ। অনেক বাস নির্দিষ্ট জায়গায়
থেমেছে যাত্রীরা কেও উঠছে কেও নামছে।
মনে হলো এই দেশ ব্রিটেনের চেয়েও উন্নত এদের রাস্তার ডিসিপ্লিন ওখানকার মতই। কোন
বাস কোথায় দাঁড়াবে তার নির্দিষ্ট জায়গা আছে। রাশেদ সাহেব রাস্তা পার হয়ে ডারবান ট্রান্সপোর্ট
এর শেলক্রস থেকে হিলভিউ গামী ১২০ নম্বর বাসে উঠে ১৭ রেন্ড দিয়ে একটা ডে টিকেট নিয়ে
বসলেন। কোথায় কি কিছুই
জানে না শুধু এইটুক জানে যে এই বাস আবার এখানে ফিরে আসবে। বসার একটু পরেই বাস ছেড়ে চলল
সামনের দিকে। ওদের বাসা যেখানে সেই বুলদানা রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, চিনতে
পারলেন। আচ্ছা ফেরার
সময় তাহলে এখানেই নামতে হবে। দেখতে দেখতে প্রায় ঘণ্টা খানিক হয়ে গেল মাঝে অনেকগুলা
স্টপেজে ধরেছে কিন্তু পথ শেষ হচ্ছে না। রাস্তার দুই পাশের দৃশ্য বেশ সুন্দর লাগছে।
প্রথম দিকে শহরের মধ্যে ছিল তাই শুধু দালান কোঠা পরে আস্তে আস্তে শহর এলাকা ছাড়িয়ে
একটু নিরিবিলি এলাকা দিয়ে যাচ্ছে। কিছু পাহাড়ি এলাকা আবার কিছু সবুজ
বনভূমি, বাউবাব গাছই বেশি, কিছু
মোপান আর মারুলা গাছও দেখা যাচ্ছে তবে ফুটপাথের বাইরে বিভিন্ন অচেনা গাছ আর পাম
ঝোপ দেখা যাচ্ছে। বাড়ি ঘরেও নানা ধরনের ঝাঁকড়া গাছগাছালি তবে দূরে বলে কোন গাছই
চেনা যাচ্ছে না। একটু পরে এক জায়গায় পৌঁছে দাঁড়াল আর সব যাত্রী একে একে সবাই নেমে
গেল তখন বুঝলেন এটাই এই রুটের শেষ গন্তব্য। রাশেদ সাহেব ঘড়িতে দেখলেন ১১ টা বেজে
গেছে তাই আর নামলেন না কালো ড্রাইভার কি যেন বললো কিছুই বুঝলেন না তবে ইশারায় বললো
আমি আবার ফিরে যাব। ড্রাইভার বুঝতে না পেরে মাথা ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল তখন
ইংরেজিতেই বললেন আমি আবার ফিরে যাব। মনে হলো এবার বুঝল। ok বলে
ইঞ্জিন বন্ধ করে নেমে গেল। পাঁচ মিনিট পরে আর এক ড্রাইভার উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট করল।
রাশেদ সাহেব সিট থেকে উঠে এসে টিকেট দেখিয়ে আবার ডান দিকে জানালার পাশে বসল যাতে
তাদের এলাকার কাছে এলে চিনতে পারে। বেশি যাত্রী হয় না। অফ পিক বলে হয়ত এমন হতে
পারে। হয়ত পিক টাইমে একটু বেশি ভিড় হয়। যাই হোক অত চিন্তার কিছু নেই। বাস ছেড়ে দিল। এখান থেকে কেও উঠেনি শুধু রাশেদ সাহেব একা। স্টপেজের নাম জানে না
তাই সতর্ক হয়ে দেখছে। অনেকক্ষণ পরে বুলদানা রোডে এলে সিটের পাশে কলিং বেল বাজিয়ে
উঠে এসে ড্রাইভারের পাশে দাঁড়ালেন, বললেন আমি
মারিয়েন্ট স্টপেজে নামব। ড্রাইভার ইশারায় বললো এখানে নামবে?
উত্তরে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালেন। আর নির্দিষ্ট ছাউনির কাছে এসে বাস দাঁড়ালে
নেমে একটু হেঁটে এসে বাসায় ঢুকলেন।
২৩২।
বাইরে থেকে ফিরে এসে কাপর বদলে ফ্রিজ খুলে গরুর মাংস বের করে
পানিতে ভিজিয়ে সবজি, টমাটো, কাঁচামরিচ
বের করে ভাজি করার মত কেটে নিলেন।পিঁয়াজ
কেটে সব আয়োজন রেডি করে ভাত বসিয়ে দিলেন। মাংস নরম হয়েছে দেখে মশলা মাখিয়ে রাখলেন। ভাত হয়ে গেলে নামিয়ে মাড় গেলে মাংস বসিয়ে ঢেকে দিয়ে
আর এক চুলায় সবজি তুলে দিলেন। আলু, ফুলকপি
আর ওলকপির মত দেখতে ওদেশের টিন্ডা ভাজি হবে। এত আস্তে আস্তে রান্না হলো তবুও
দুইটার আগেই রান্না হয়ে গেল আর অমনিই কলিং বেল বাজল। নিশ্চয় আহাদ এসে পড়েছে। দরজা
খুলে দেখে হ্যাঁ তাই।
-এসো এসো।
-ঘরে ঢুকেই সবজি আর মাংসের গন্ধ পেয়ে আহাদ শুধু শুঁকছে।
-কি হচ্ছে কি এসব? এত চমৎকার ঘ্রাণ!
চল চল আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে খেতে বসি বলেই কিচেনে যেয়ে পাতিল সহ টেবিলে নিয়ে এলো।
রাশেদ সাহেব প্লেট গ্লাস এসব এনে হাত ধুয়ে বস্লেন। এবারও খাবার সময় আহাদ চমৎকৃত হলো।
-সত্যিই তুমি অসাধারণ রান্না করেছে, মনে
হচ্ছে জীবনে এই প্রথম কোন সুস্বাদু খাবার খাচ্ছি।
আরে না না তুমি সাধারণত রেস্টুরেন্টে খাও তো তাই এমন মনে হচ্ছে, কয়েকদিন
পরেই দেখবে আর ভাল লাগছে না। অবশ্য এগুলা আমি আমাদের দেশের মত করে রাঁধছি তবে আমি
একবার চেষ্টা করে দেখব তোমার ইজিপশিয়ান রান্না করতে পারি কিনা।
-বল কি! তুমি ইজিপশিয়ান রান্না কি করে করবে?
-কেন ওয়েব সাইটে রেসিপি দেখে নিব।
-রিয়েলি ইউ আর ট্যালেন্ট।
-আরে আগে দেখি পারি কিনা তারপরে কমপ্লিমেন্ট দিও।
-আমি জানি তুমি পারবে।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।