বেলা শেষের গান

বেলা শেষের গান-১

১।
হাসান সাহেব মতিঝিলের শিল্প ব্যাঙ্কের নয় তলায় বন্ধু সাজ্জাদ সাহেবের অফিস থেকে বের হয়ে নিচে নেমে এলেন। গেটের বাইরে এসে ফুট পাথে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন, এখানে কোন কাজ হলো না এখন কোথায় যাবেন। পকেট থেকে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট বের করে দেখলেন আরও তিনটা সিগারেট আছে কাজেই এখন একটা জ্বালাতে
অসুবিধা নেই। সিগারেট জ্বালালেন। না, আজ আর কোথাও গিয়ে লাভ নেই তার চেয়ে বাসায় চলে যাওয়াই ভাল। সিগারেটটা জ্বালিয়ে বাম দিকে ঘুরে কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেটের বাসার পথে হাটা শুরু করলেন। পকেটে বাস ভাড়াও নেই, হাটা ছাড়া আর কিই বা করবে। হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট থাকলে ভাবনার পথ গুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। পথে কোন আবর্জনা এসে অহেতুক বিড়ম্বনা বাধাবার সুযোগ পায় না। নীরবে আপন মনে ভাবতে সুবিধা হয় অন্তত বিগত কয়েক বছর ধরে তাই দেখে আসছেন। সেই যখন বীমা কর্পোরেশন থেকে এক সাজানো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চাকরীচ্যুত হয়েছেন তখন থেকে এই ধারনাটা তাকে পেয়ে বসেছে। চাকরীটা বেশ ভাল ছিল। উত্তর বাংলার রিজিওনাল ম্যানেজার, বগুড়া শহরে অফিস। বাড়ি গাড়ি থেকে ড্রাইভার সবই ছিল।

এখনও হাল ছেড়ে দেয়নি। বিভাগীয় সাজানো তদন্ত শেষ করে যে দিন ঢাকার হেড অফিস থেকে তার নামে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার একটা অতি গোপনীয় চিঠি দিল সেই দিনই কোন প্রতিবাদ না করে ধীর ঠাণ্ডা মাথায় কর্তৃপক্ষকে তার বিদায়ের একটা চিঠি দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এই ভাবে অফিসের বাইরে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটু ভেবেছিলেন। তার জন্য যে গাড়ি ছিল আজ সেটায় তার আর কোন দাবী নেই। অথচ সকালেও ওই গাড়িতে করেই অফিসে এসেছিলেন। প্রথমে যখন সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পেয়েছিলেন তাতে বিভিন্ন আজে বাজে মিথ্যা কারণ দেখিয়ে তাকে কেন এই চাকরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না তা আগামী তিন দিনের মধ্যে লিখিত ভাবে জানাতে বলেছিল। চিঠিটা পেয়ে একটু নয় বেশ অবাক হয়েছিলেন। তারপরে তার বক্তব্য তুলে ধরে একটা জবাব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার জবাবের প্রেক্ষিতে সাধারণ মাপের একটা তদন্ত কমিটি নামকা ওয়াস্তে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে এই দুই দিনের মধ্যেই জবাব দিয়ে দিল। সে দিনও রিকশা নয় পায়ে হেটে জলেশ্বরী তলার কোম্পানির বাসায় চলে এসেছিলেন। বাসাটাও যেহেতু কোম্পানির দেয়া তাই এ বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য মাত্র সাত দিন সময় দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেড় হয়েই বেশ উচ্চ পদ নিয়েই ওই কোম্পানিতে জয়েন করেছিলেন এবং তখন থেকেই গাড়িতে চলাচল। সেদিন এই ভাবে পায়ে হেটে বাসায় ফেরার পথে এমনি করেই একটা সিগারেট জ্বালিয়ে হেটে আসছিলেন আর ভাবছিলেন এখন কি করা যায়। আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আর কোন গতি খুঁজে পাননি। এদিকে বাসা ছেড়ে কোথায় থাকবেন এও এক প্রশ্ন। ওই সিগারেট হাতে নিয়েই হেটে আসার পথে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। প্রথমে আদালতে মামলা দায়ের করে দুই চার দিনের মধ্যে সব কিছু গুছিয়ে ঢাকায় মতিঝিলে বড় বোনের বাসায় এসে আপাতত উঠবেন পরে অবস্থা বুঝে যা হয় করা যাবে।
২।
বাসায় এসে পৌছলে হাসান সাহেবের স্ত্রী রেহানা, দুই ছেলে শামীম এবং ফাহিম তাকে এভাবে পায়ে হেটে অসময়ে বাসায় ফিরতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উদভ্রান্ত হাসান সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু অনুমান করতে পারছিল না। হাসান সাহেব নিজেই বললেন এখান থেকে আমাদের চলে যেতে হবে, আমার চাকরী আর নেই। এ কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা। তিনি আশ্বাস দিলেন তোমরা ভাবছ কেন? চল ঢাকায় যাই ওখানে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এতে তার স্ত্রীর মন থেকে দোদুল্যমান ভাব কিছুতেই দূর হতে পারেনি। দুপুরে খাবার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে ঢাকায় তার ব্যারিস্টার বন্ধু ইমতিয়াজের সাথে ফোনে সমস্ত বিষয় জানিয়ে পরবর্তী করনিয় সম্পর্কে আলাপ করে নিল। ব্যারিস্টার সাহেব তাকে আশ্বাস দিল যে আগামী কাল তার জুনিয়রকে পাঠিয়ে দিবে সে ওখানে যেয়ে মামলার যাবতীয় কাজ করে আসবে।
বিগত পনের বছর ধরে যে কোম্পানিকে আজ এই পর্যায়ে এনে দাড় করিয়েছে, সেখান থেকে তাকে কেন এমন করে বের হয়ে আসতে হয়েছে তা সে জানে। এর পিছনে যারা জড়িত তাদের সবাই তার সুপরিচিত। কিন্তু প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের অধিকারী হাসান সাহেব তাদের সাথে অযথা বাক বিতণ্ডায় যেতে রাজী নন।
ফুটপাথ ধরে হাঁটছেন আর ভাবছেন। হাতের সিগারেট পুড়ে তামাক শেষ হয়ে গেছে এখন দুই আঙ্গুলের ফাকে ফিল্টারের টুকরাটা ধরে রেখেছেন তার সেদিকে কোন মন নেই। মাঝে মাঝে ওই খালি ফিল্টারেই টান দিচ্ছেন তামাক পোড়া কোন ধোয়া আসছে না তাও বুঝতে পারছেন না। ফার্মগেটের কাছে এসে দেখে ছোট ছেলে ফাহিম শাহিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ফার্ম গেটের বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছে। ফাহিম একটু দূরে থাকতেই দেখল তার বাবা অন্যমনস্ক ভাবে হেটে আসছে। কাছে এগিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করল আব্বা আপনি কোথায় যাচ্ছেন? কে, ও বাবা তুমি এখানে কি করছ? বাসের অপেক্ষা করছি আব্বা। ও আচ্ছা তুমি যাও আমার এই তো সামনেই একটা কাজ আছে ফিরতে একটু দেরি হবে, সাবধানে যেও। বলেই আবার হাটা শুরু করলেন। বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউর মাঝামাঝি চলে গেছেন এমন সময় ফাহিমের বাস ওই রাস্তা দিয়ে যাবার পথে বাসের জানালা দিয়ে ফাহিম দেখল তার বাবা সেই আগের মত হেটে যাচ্ছে। অত টুক ছোট ছেলে বুঝতে পারেনি যে তার বাবার পকেটে বাস ভাড়ার টাকা নেই বলে মতিঝিল থেকে হেটে বাসায় ফিরছে। তার ছোট মনে তবুও একটু ছোট কৌতূহলের উদয় হলো, আব্বা এই এত দূর হেটে আসছে কেন? আব্বা যে তার স্কুলের বেতন দিতে মাঝে মাঝে হিম শিম খায় তা লক্ষ করেছে কিন্তু এখনো তা গভীর ভাবে অনুভব করার মত হয়ে উঠেনি। দেখি বাসায় গিয়ে আম্মার কাছে জেনে নিব।

হাসান সাহেবের আজকের পুরো দিনটাই যেন কেমন গেল কোথাও কোন কাজ হলো না। সকালে বেরিয়েছিল সাজ্জাদের সাথে দেখা করে রহমত আলির মিলের জন্য একটা লোণের ব্যাপারে আলাপ করতে। লোণটা হলে রহমত আলি অবশ্যই কিছু দিত যা দিয়ে অন্তত জমে থাকা কয়েক মাসের বাসা ভাড়াটা দেয়া যেত। সাজ্জাদ জানিয়ে দিয়েছে ওই সেক্টরে আপাতত কোন লোণ দেয়া হচ্ছে না। দিনটাই মাটি হলো। [চলবে]
[নওরোজ সাহিত্য সম্ভারের প্রকাশনায় আগামী ২০১৭ বই মেলায় প্রকাশের অপেক্ষায়।]

1 comment:

  1. Pokies Online - Real money casino no deposit - Casino
    No 먹튀 랭크 deposit casino bonus with real money casino 바카라게임사이트 no deposit. 포커 to play real money 벳 365 코리아 우회 games with no deposit needed, 점심 메뉴 룰렛 and they have their own casino offering.

    ReplyDelete

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।