১৯৪।
পরদিন
সকালে উঠে গোসল করে নামাজে যাবার জন্য রেডি হয়ে তিথিকে নিয়ে খাবার জন্য কিচেনে
বসেছে এমন সময় ভাবী তিথির জন্য কেনা এক সেট নতুন পোষাক এনে দিল। মিষ্টি, পায়েস আর সেমাই খেয়ে
ফিরোজ গাড়ি বের করতে
গেল রাশেদ সাহেবও তার সাথে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। ওরা বেরিয়ে
যাবার পর ভাবী মেয়েকে বুঝিয়ে বলেছে, এক ছেলে আসছে তাকে দেখবে, তোমার ভাল লাগলে আমাকে
জানাবে। নামাজ পড়ে এসে ফুফু আম্মাকে সালাম
করে বসার ঘরে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে আবার বিরিয়ানি খেতে বসেছে এমন সময় দরজায় কলিং
বেল বেজে উঠল। ফিরোজ উঠে গিয়ে দরজা খুলে রাজীবকে সরাসরি টেবিলে নিয়ে আসল।
-তোমার
অপেক্ষা করছিলাম, নামাজ
পড়েছ কোথায়?
-স্টেপনি
গ্রিন মসজিদে।
ফিরোজ
রাশেদ সাহেবকে ইশারায় বলে দিল এই ছেলে। খেতে খেতে আলাপ হলো। কি করছে কোথায় থাকে, বাড়িতে কে কে আছে কি
করে ইত্যাদি যা যা জানতে হয়। ফিরোজ আগেই বলেছিল তবুও সরাসরি ছেলের মুখ থেকে শোনা।
বেথনেল গ্রিনে থাকে, গ্রিনিচ
ইউনিভার্সিটিতে টেলি কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। টেসকোতে পার্ট টাইম চাকরি করে।
বাড়িতে বাবা নেই মা একা, বাবা এডভোকেট ছিলেন। বড়ভাই ডাক্তার, পরিবার সহ মিডল ইস্টে
থাকে ছোটভাই ইঞ্জিনিয়ার সেও কানাডায় থাকে। এক বোন, স্বামী কলেজের প্রফেসার। রাশেদ
সাহেবের ছেলে পছন্দ হয়েছে। দেখতে শুনতে বেশ। কথা বার্তা আচার আচরণ বেশ ভাল লাগল।
খাবার শেষ হলে সবাই এসে ড্রইং রুমে বসল তবে ছেলে আর মেয়েকে একান্তে আলাপ করার
সুযোগ করে দিয়ে ভাবী ফিরোজ আর রাশেদ সাহেবকে ভিতরে নিয়ে গেল।
-কী,
কেমন
দেখলেন?
-ভালই
মনে হচ্ছে,
আর তা
ছাড়া আপনাদের সিলেকশন কি আর খারাপ হবে?
-তাহলে
কথা বার্তা বলবে?
-ছেলের
একটা ছবি পেলে বাড়িতে পাঠাতাম মনি দেখত।
-হ্যাঁ
এখনই আমি তুলে নিচ্ছি, আপনি
মেইল করে দিন,
ভাবী
দেখে তার মতামত জানাক।
-শোন
ফিরোজ এ ব্যাপারে শুধু আমরা দেখলেই হবে না, ছেলের মাকেও দেখতে জানতে হবে।
-হ্যাঁ
তুমি আগে বল তারপরে আমি সে সব দেখছি। যা হবে তা আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ীই হবে।
ছেলের মা বা অন্য কেও প্রস্তাব নিয়ে ভাবীর কাছে আসবে, তবেই না হবে।
-দেখ
মেয়ে এবং ছেলে কি বলে!
-হ্যাঁ
অপেক্ষা করি।
বিকেলে
এ বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে খুকুর সাথে ওর বাসায় চলে গেল। তানিমরা ওদের অপেক্ষায় ছিল।
কেয়া বললো-
-ভাইয়া, আমরা এখনও কিছু রান্না
করিনি, আপনি আসলে কি খাবেন
তাই রান্না করব।
-আরে
এটা কি করেছ?
যাও যাও
রান্না কর,
তোমার যা
ইচ্ছা তাই কর,
আমার কোন
চাহিদা নেই।
কেয়া
রান্না ঘরে চলে গেল। রাশেদ সাহেব খুকুর ল্যাপটপ অন করে ঢাকার সাথে আলাপ শুরু করলেন। একে
একে সবার
সাথেই সবার কথা হলো। মনি জিজ্ঞেস করল-
-মেয়ের
সাথে ঈদ কেমন লাগছে?
-বুঝতেই
পারছ, এমন সুযোগ পাব ভাবতেই
পারিনি। হঠাৎ করে ওখান থেকে চলে যাবার অর্ডার হওয়াতে এই সুযোগটা পেয়েছি নয়ত আগের
মতই একা একা করতে হোত। তোমরা কাল ঈদ করবে তাই না?
-হ্যাঁ
আমাদের ঈদ এইতো রাত পোহালেই হবে
-কি
কি রান্না করছ?
-তুমি
যা খেতে,
তোমার
মেয়েরাও তেমনই হয়েছে, তাই
করছি। মাংস কষাচ্ছিলাম এমন সময় তোমাদের ডাক পেলাম। তোমরা
কি খেয়েছ?
-আরে, ভাবী এলাহি কাণ্ড
করেছিল। কাল যা ইফতার বানিয়েছিল তার হিসাব দিতে গেলে আমার মাথায় কুলাবে না। বাংলা, ইংলিশ, আরবি কিছুই বাদ দেয়নি
আবার আজ সকালে দুপুরে যা করেছিল সেও অনেক কিছু। আবার এখানে এসে দেখি কেয়া কিছু
রান্না করেনি আমার অপেক্ষায় ছিল, এইমাত্র কিচেনে গেল
যাক
তোমাদের কথা শুনে ভাল লাগল। সত্যিই এটাই আমার এখানকার সবচেয়ে
বড় ঈদ। তুমি কিন্তু সকালেই শাড়ি পরবে।
-কি
যে বল!
-দেখ
তুমি পরতে না চাইলে কি হবে মেয়েরা ঠিক পরিয়ে দিবে।
-হ্যাঁ
তা তো হবেই মেয়েগুলি হয়েছে ঠিক তোমার মত।
-আচ্ছা
শোন, ফিরোজের বাসায় ওই
ছেলেটা এসেছিল।
-কেমন
দেখলে?
-ভালই, খুবই অমায়িক ছেলে। আমি
ফিরোজকে বলে এসেছি আর ছবি দিচ্ছি দেখ, তোমরাও দেখ।
-দাও
দেখি।
ছবি
দেখে মনি এবং মেয়েদের পছন্দ হয়েছে। এই নিয়ে খুঁটিনাটি যা ফিরোজ বলেছে এবং ছেলের
কাছে শুনেছে সে সব আরও কিছু আলাপ হলো। ভাবী মেয়েকে আগেই বলে রেখেছিল, পরে আবার ওদের সাথে
কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিল। মেয়ে কি বলবে এখনও জানতে পারিনি তবে ভাবী জানলেই
আমাকে জানাবে।
-দেখ
মেয়ে কি বলে।
মেয়েদের
সাথেও বড় আপুর সাথে প্রথম ঈদের অনেক গল্প হলো। কাল আবার কথা হবে।
১৯৫।
ঈদের
ছুটি শেষ হবার দু দিন আগেই মিজানের অফিস থেকে ফোন এলো। ডেভিড ফোন করেছে।
-রাশেদ, তোমার ঈদ শেষ হয়েছে?
-হ্যাঁ, কেন কি ব্যাপার?
এ দেশে
সাধারণত ছুটি কাটাবার সময় নিতান্ত জরুরী কোন ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত কাজের জায়গা থেকে
ফোন করে বিরক্ত করে না। তাই রাশেদ সাহেব একটু অবাক হলেন!
-একটু
সমস্যায় পরেই তোমাকে ফোন করছি!
-কি
হয়েছে খুলে বল।
-বলছি, ব্রীজেন্ড এর সনি
কোম্পানি তো তুমি চেন তোমাকে কাল ওখানে যেতে হবে, বস একথা বলার সময় তোমার ছুটি শেষ
হয়নি বলে খুব ইতস্তত করছিলো কিন্তু তুমি ছাড়া হচ্ছেও না কারণ এর আগের বার তুমিই
ওখানে গিয়েছিলে ওদের ক্যামেরায় কি যেন হয়েছে।
-আচ্ছা
ঠিক আছে ডেভিড,
তুমি
বসকে বল আমি কালই যাচ্ছি।
বিলাতে
এতদিন থাকলেও রাশেদ সাহেব বিলাতি খাবারে অভ্যস্ত হতে পারেনি, এদিকে আবার তার গাড়িও
নেই যে ব্রীজেন্ড গিয়ে মর্জিনার বাসায় কিংবা রেস্টুরেন্টে খেয়ে আসবে। এখানে ওরা
থাকার ভাল ব্যবস্থা করে দিয়েছে কিন্তু রান্নার ব্যবস্থা নেই, শুধু ফ্রিজ আর
মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে। নিরুপায় হয়ে আবারক্যানফিগ থেকে পিজা, স্যান্ডউইচ, ডোনার কাবাবের সাথে
নান রুটি,
চিপস এই
সব খেয়েই দিন পার করেছে আর কবে কাজ শেষ করতে পারবে সেই দিন গুনেছে। তবে সকালে যখন
নাদির ডিউটিতে যেত তখন প্রায়ই মর্জিনা কিছু খাবার প্যাকেট করে দিয়ে দিত। মাঝে কয়েক
দিন নাদির অফিস থেকে যাবার সময় বাসায় নিয়ে গিয়েছে আবার রাতে খাবার সেরে ফিরিয়ে
দিয়ে গিয়েছে।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।