২০০।
টমি রাশেদ
সাহেবকে দেখে ঘেউ ঘেউ করেই চলেছে তখনই পিটার ধমক দিয়ে বললো ওহ টমি স্টপ, হি ইস আউয়ার কলিগ, ডোন্ট বি সিলি। এর
মধ্যে রাশেদ সাহেব একটু পিছিয়ে এসেছেন, বুঝলেন তাহলে এই হচ্ছে টমি। পিটার
বললো তোমার পকেট থেকে
পিআইডি চাবিটা বের করে ওকে দেখাও। তালা খোলার জন্য সবুজ রঙ এর একটা ম্যাগনেটিক
চাবি সবার কাছেই একটা করে থাকে, পকেট থেকে সেটা বের করে ওকে দেখাতেই টমি তড়াক করে লাফ দিয়ে
ডান হাতের কাছে চলে এলো আর তা দেখেই সেই দিনের কথা মনে হয়ে শরীরের রক্ত মনে হলো
ঠাণ্ডা বরফ হয়ে গেছে, রাশেদ
সাহেব নড়তে পারছে না, সব
থেমে গেছে। শ্বাস বইছে কিনা বুঝতে পারছে না। টমি কাছে এসেই হাতে ধরা চাবিটা শুঁকছে
তখন মনে হচ্ছিল হাতটা বুঝি এবার গিলেই ফেলবে। না, সে তা আর করেনি তবে সে রাশেদ
সাহেবকে ভাল ভাবে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতে পারেনি। রাগে গড়গড় করতে করতে
যেখানে বসে ছিল সেখানে ফিরে গেল। এবার পিটার ওর কাছে গিয়ে বুঝিয়ে বললো দেখ টমি এ
হচ্ছে রাশেদ আমাদের সহকর্মী এর সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার করবে না, এর সাথে তোমাকে কাজ
করতে হবে,
সাবধান
আমি যেন কোন অভিযোগ শুনি না। পিটার বললো কিন্তু টমি কি বুঝল কে জানে তবে গড়গড়া
বন্ধ হয়েছে আর তার সাথে একটু একটু করে লেজ নাড়ছে।
আবার
কন্ট্রোল রুমে ফিরে গেল।
-রাশেদ
তোমার ল্যাপটপ এনেছ?
-আরে
না এইতো ক’দিন আগে ওটা ভেঙ্গে গেছে।
-মানে? খুলে বললো সে কাহিনী।
ব্রীজেন্ড
থেকে মর্জিনাদের বাসায় যাবার পথে বাসে গিয়ে একটু পথ হেঁটে যেতে হয় তখন বরফের উপর
দিয়ে হাঁটার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে কাঁধে ঝোলান ব্যাগের ল্যাপটপের মনিটর ভেঙ্গে
গেছে।
-ও, তাহলে কি এখন আর একটা
কিনবে?
-না
পিটার এখন আর কেনা সম্ভব নয়, দেখি কিছু দিন পর ক্রিস্টমাসের সেল এর সময় কিনতে হবে।
-তাহলে
এই ডেস্কটপ দিয়েই কাজ চালিয়ে নাও। আচ্ছা তাহলে সব দেখলে তো, বাকী যা আছে টমি
দেখিয়ে দিবে,
এখন
তাহলে আমি বাই বলি?
-হ্যাঁ
ঠিক আছে,
তুমি
বিশ্রাম নাও গিয়ে কাল আবার দেখা হচ্ছে।
-পিটার
বাই বলে চলে গেল।
২০১।
এই
জায়গাটা হচ্ছে প্রায় ১০ একর জায়গার উপর১৯২৬ সালে তৈরি লেস্টার শহরের প্রথম বাস
ডিপো। প্রথম দিকে এই শহরে যখন ট্রাম চলতো
তখনও এটাই ছিল ট্রাম ডিপো। সাবেক আমলের ধরন গড়নে তৈরি বলে এখন এই আধুনিক যুগে আর
চলছিলো না তাই এটা বিক্রি করে দিয়ে কাছেই অন্য জায়গায় আধুনিক যুগের উপযোগী নতুন ডিপো বানিয়ে এরা
ওখানে চলে গেছে আর এখানে হবে আবাসিক পল্লী। এতদিন যাবত এখানে গাড়ি, ইঞ্জিন ইত্যাদি
চলাচল করে মাটিতে ডিজেল মবিল পড়ে মাটি দুষিত হয়ে গেছে যা মানুষের আবাসিক এলাকার
জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে প্রায় ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি সরিয়ে নতুন মাটি দিয়ে ভরাট করে
এখানে ৭২০ টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। এই পুরনো আমলের এলোমেলো ভাবে নির্মিত
ছোট বড় নানান সাইজের বিল্ডিংয়ের ভিতরে যাতে মাদক সেবীরা এসে আখড়া না বানাতে পারে
যার জন্য প্রায় ৩৬টা সিসি ক্যামেরা এবং ৪টা মনিটর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পাহারাদারি করার চুক্তি
হয়েছে রাশেদ সাহেবদের কোম্পানির সাথে।
পিটার
চলে যাবার পর রাশেদ সাহেব বের হলেন টমিকে নিয়ে ক্যামেরাগুলি কোথায় কোথায় আছে তা
দেখার জন্য। টমি নাকি জানে সেই সব দেখিয়ে দিতে পারবে। টমির ঘরে এসে দেখে শুয়ে আছে
তাকে দেখে দাঁড়ালো। ওর গলার চেইন খুলে বাংলায় বললো চল এলাকাটা ঘুরে আসি। ঘড় ঘড়।
-কি
বাংলা বুঝ না?
এবার
বসে পড়লো,
আবার
ইংরেজিতে বললো।
আবার ঘড়
ঘড়। সমস্যা, কি করবে এখন ভেবে পাচ্ছে না। একটু
ইতস্তত করে টমির চেইন ধরে বাইরে নিয়ে এলো। হ্যাঁ এবার কাজ হবে বলে মনে হলো। হ্যাঁ
টমি সাহেব দাঁড়ালেন, ঘর
থেকে বের হয়ে আগে আগে যাচ্ছে রাশেদ সাহেব তার পিছনে হাতে চেইন ধরে যাচ্ছেন। একটা
একটা করে যেখানে উপরে ক্যামেরা লাগানো আছে তার নিচে এসে উপরে মুখ তুলে দাঁড়ায় আর
রাশেদ সাহেব টর্চ দিয়ে দেখে ক্যামেরা আছে।
এই ভাবে প্রায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পুরো এলাকাটা জরিপ করে যখন ফিরে আসছে তখন টমি
সাহেব হঠাৎ করেই এক লাফ দিতে চাইল কিন্তু ওর গলার চেইন শক্ত করে ধরা থাকায় আর পেরে
উঠেনি, রাগে গড় গড় করছে। কি
করবে এখন?
আবার ভয়
শুরু হলো! এবার আর বাংলা না শুধু ইংরেজিতেই বলছে কিন্তু উনি কিছু বুঝতে চাইছে না, হয়ত রাশেদ সাহেবের
উচ্চারণ সে বুঝতে পারছে না। যাই হোক কোন ভাবে মানিয়ে মানিয়ে ঘরে এনে বেঁধে রেখে ঘর
তালা দিয়ে দিলেন।
মনিটর
গুলিতে চোখ ঘুড়িয়ে দেখলেন ঠিকই আছে আশে পাশে কাওকে দেখা যাচ্ছে না। মনে মনে ভাবছেন
টমি সাহেবের সাথে এভাবে এখানে থাকা সম্ভব নয় কালই পিটার এলে ওকে খুলে বলতে হবে যেন
ক্রিসকে বুঝিয়ে বলে তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। রাতটা কেটে গেল, সকালে পিটার এলে ওকে
খুলে বললেন,
হাতের
পুরনো ক্ষতটা দেখালেন। আচ্ছা ঠিক আছে আমি আজই ক্রিসকে খুলে
বলবো তুমি এখন ঘুমাও গিয়ে। পিটারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে এসে কাপড় পালটে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। বিগত
এক মাসের ক্লান্তি, আর
রাত জেগে কাজের পর শোবার সাথে সাথেই ঘুম।
২০২।
একবারে
সন্ধ্যা
চারটায় ঘুম ভাঙল, এখানকার
শীতের চারটা মানে রাতের অন্ধকার হয়ে গেছে, রাস্তার আলো জ্বেলেছে অনেকক্ষণ, ওপাশের এবে পার্কের
গেটের বাইরে কোন গাড়ি নেই। হাত মুখ ধুয়ে খেতে যাবার সময় পিটারের কাছে গেটের চাবি
আনতে গেছে আর অমনি পিটার প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো-
-ওহ
রাশেদ, তোমার গুড নিউজ আছে!
-কি?
-একবারে
হেড অফিসে যাচ্ছ তুমি।
-মানে? মানে আর কি, তুমি ক্রিসকে বলতে বলেছিলে
না?
-হ্যাঁ
-ক্রিসকে
বলাতেই সে বললো ও, তাহলে
ওকে এখানে আসতে বলে দাও।
-তাই
নাকি? বলে একটু বসলেন। কবে
কখন যেতে বলেছে?
-কাল
সকালেই চলে যাও আজ রাতের ডিউটি করতে হবে না। এরিক আসছে আজ এখানে ওই করবে তুমি
রেস্ট কর।
-বল
কি! একটু অবাকই হলেন, কত
দিন নিউক্যাসেলের বাইরে!
-তাহলে
শোন পিটার আমি এখনই বের হই আগে টিকেট নিয়ে ওখান থেকেই খেয়ে আসি না হলে কাউন্টার
বন্ধ হয়ে যাবে।
-কেন
আবার টিকেট করতে এতো দুরে যাবে কেন এখান থেকেই অনলাইনে করে প্রিন্ট করে নাও।
-ও
হ্যাঁ আমি ভুলেই গেছিলাম। আচ্ছা ঠিক আছে অন্তত খেয়ে আসি, তুমি যাবে আমার সাথে?
-না
না তুমি যাও খেয়ে আস।
পরদিন
দুপুরে পিটারের আছ থেকে বিদায় নিয়ে সেন্ট মার্গারেট কোচ স্টেশনে এসে আড়াইটার কোচে
উঠে বসলেন। সময়মত কোচ ছেড়ে দিল। মাঝে লীডসে প্রায় এক ঘণ্টার ট্রানজিট, কোচ বদলাতে হবে। বাস
থেকে নেমে টার্মিনালের ভিতরে দোকান থেকে একটা টুনা বাগেট (লম্বা গোল মত পাউরুটি
ফালি করে কেটে দুই ভাগ করে ভিতরে টুনা মাছ আর সালাদ দেয়া স্যান্ডউইচের মত) আর এক
ক্যান ডায়েট কোক নিয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে খেয়ে আবার গিয়ে কাগজের গ্লাসে এক গ্লাস চা
এনে আরামে বসে বসে চা খাচ্ছেন আর ভাবছেন কারো সাথে যোগাযোগ করলাম না ওখানে গিয়ে
কোথায় কি ভাবে থাকবো কিছুই জানলাম না এতো রাতে গিয়ে কোন ঝামেলায় পরি এমনিই শীতের
রাত! ডেভিড কে ফোন করলেন।
-কি
খবর ডেভিড,
কেমন আছ?
-হ্যাঁ
রাশেদ ভাল আছি,
তুমি কখন
আসছ?
-রাত
হবে আমি এখন লীডসে। আমার থাকার কি ব্যবস্থা করেছে?
-সব
ব্যবস্থা ঠিক করা আছে তোমার ঘরের চাবি আমার কাছে আছে।
-তোমার
কাছে থাকলে হবে নাকি তা আমাকে পেতে হবে?
-হ্যাঁ
হ্যাঁ পাবে,
তুমি
এলেই পাবে।
-আচ্ছা
ভাল কথা,
পেলেই
হবে।
২০৩।
রাত
প্রায় আটটার দিকে মটর ওয়ের পাশে কোন সার্ভিস স্টেশনে যেন থামল। হাতের গ্লোভস পরে
কোচ থেকে নেমে গেলেন সার্ভিস স্টেশনের ভিতর। এক গ্লাস কাল কফি নিয়ে বাইরে এসে
দাঁড়িয়ে পকেট থেকে তামাক বের করে মাত্রই জ্বালিয়েছে অমনি ফোন বেজে উঠলো। এখন আর কেও
ফোন করবে না ভেবে একেবারে ভিতরে শার্টের পকেটে রেখেছিলেন।
এক হাতে
পকেট খুঁজে ফোন বের করে দেখে অচেনা নম্বর, যেই হোক,
-হ্যালো।
ওপাশ
থেকে সুললিত মার্জিত কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে ভেসে এলো-
-ইজ
ইট রাশেদ দেয়ার?
-ইয়েস
স্পিকিং।
-ও
বেশ, আমি ডার্লিংটন থেকে
এলিজাবেথ ক্যাম্পবেল।
-বল
এলিজাবেথ আমি তোমাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?
-তুমি
কখন এসে পৌঁছবে?
-মানে
কি, তুমি আমাকে চেন, কোথায় পৌঁছানোর কথা
বলছ? এক সাথে তিনটা প্রশ্ন
করল।
-হ্যাঁ
চিনি এবং খুব ভালো করেই চিনি।
-আশ্চর্য!
-আশ্চর্য
হবার কিছু নেই আমি তোমার সহকর্মী যদিও আমাদের দেখা বা পরিচয় হয় নি এখনও তবে আশা
করছি আজই হবে।
-আর
একটু খুলে বলতে পার?
-তুমি
যখন নরউইচে ছিলে, মনে
আছে?
-হ্যাঁ
তা আছে।
-তখন
আমি জয়েন করেছি,
আমি
ক্রিসের সেক্রেটারি।
-আচ্ছা
এলিজাবেথ,
বেশ ভালো
কথা, শুনে খুশি হলাম, এখন বল আমি তোমার জন্য
কি করতে পারি?
-ওই
যে বললাম তুমি কখন নিউ ক্যাসেল পৌঁছাবে সেটা জানিয়ে আপাতত ধন্য কর বাকিটা পরে
দেখবো।
-সে
কি করে সম্ভব বল?
-কেন?
-কেন
আবার কি কোচ তো আর আমি চালাচ্ছি না, কোচ চালাচ্ছে ড্রাইভার সেই ভালো বলতে পারে কখন পৌঁছাবে।
-দেখ
তুমি নীল নয়না স্বর্ণ কেশী খাটি স্কটিশ এক সুন্দরীর সাথে কথা বলছ সুন্দরীদের সাথে কেও
এভাবে দুষ্টামি করে? দুষ্টামি
রেখে বল কখন আসছ, তোমাকে
রিসিভ করে তোমার ল্যাংকেস্টার স্ট্রিটের বাসার চাবি সহ তোমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য
বসের নির্দেশে আমি বসে আছি, তুমি তোমার পকেটে হাত দিয়ে টিকেট বের করে দেখ ওখানে লেখা
আছে। তুমি কখন আসছ তাই বুঝে আমাকে আবার
ডঙ্কেস্টার যেতে হবে, মোটকু
ডেভিড আমার হাতে চাবি না দিয়েই ওখানে চলে গেছে।
-তা
তুমি সুন্দরী না জল হস্তী তা আমি কি করে বুঝি বল তবে তুমি যে স্কটিশ তা তোমার কথা
এবং নাম শুনেই বুঝেছি, ক্যাম্পবেলেরা
স্কটিশ এটা আমি জানি। যাই হোক, তোমাকে তো তাহলে বেশ ঝামেলায় ফেলেছে, আমার দুঃখ হচ্ছে যে
আমার জন্যই তোমাকে কষ্ট করতে হচ্ছে। আচ্ছা একটু লাইনে থাক আমি টিকেট দেখে বলছি
এক হাতে
কফির গ্লাস আর এক হাতে ফোন পকেট দেখবে কি করে? একটু এগিয়ে এসে কোচের হেড লাইটের
উপরের শেডে কফির গ্লাস নামিয়ে রেখে সব পকেট হাতাল কিন্তু নেই। শীতের
দিনে এমনিতেই পকেট বেশি থাকে, কোথায় রেখেছে মনে করতে পারছে না। আবার দেখল না নেই কোথাও
নেই।
-শুনছ
এলিজাবেথ টিকেট পাচ্ছি না
-পাচ্ছি
না মানে আবার কি, তাহলে
কোচে উঠলে কেমন করে?
-তখন
ছিল ড্রাইভারকে দেখিয়েছি কিন্তু এখন পাচ্ছি না।
-আচ্ছা
শোন তুমি যে সিটে বসেছ তার আশে পাশে দেখ হয়ত পকেট থেকে পড়ে গেছে।
-হ্যাঁ
তা হতে পারে। বলে গাড়িতে উঠে সিটের কাছে এসে দেখে এইতো নিচেই পড়ে আছে।
-হ্যাঁ
এলিজাবেথ তুমি ঠিকই বলেছ, এইতো পেয়েছি, আচ্ছা আমি রাত দশটা দশ মিনিটে ইন করবো।
-আচ্ছা, এখন রাত ৮টা তাহলে আমি
এখনই ডঙ্কেস্টার যাচ্ছি, আমার আসতে যদি একটু দেরিও হয় তুমি অপেক্ষা করবে, তাহলে একটু পরেই দেখা
হচ্ছে! বলেই রেখে দিল।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।