১৮৮।
নাদির
একটু সুস্থ হয়ে মর্জিনাকে নিয়ে সমসু ভাইদের রেস্টুরেন্টে এসে তাদের কৃতজ্ঞতা
জানিয়েছে। আসার পথে গাড়িতে বসেও অনেক কথা বলেছে।
আরে ভাই
কি যে বলেন,
আপনি
আবার এ কথা জানাতে এসেছেন! এটা আমাদের দায়িত্ব না? দেশের একজন মহিলাকে এমন অবস্থায়
কেও না দেখে পারে? আপনাকে
এত ফর্মাল হতে হবে না। আমরা যা করেছি এটা আমাদের দায়িত্ব।
আপনিও কি এমনটা করতেন না?
বাসায়
ফিরে আসার পর প্রতিদিনই রাশেদ সাহেব দুপুরে ডিউটি সেরে নাদিরের বসায় যেয়ে খোঁজ খবর
নিয়ে আসে। নাদিরের হাতে প্লাস্টার বলে সে বাজার বয়ে আনতে পারে না। মাঝে মাঝে মর্জিনাকে নিয়ে পাশের টেসকো সুপার শপে
যেয়ে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই কিনে দিয়ে আসে। এখানকার সুপার শপে বাঙালি খাবার পাওয়া
যায় না বলে রাশেদ সাহেব একদিন মর্জিনাকে নিয়ে সোয়ান সি থেকে মাছ মাংস মশলা এনে
দিয়েছে। রাশেদ সাহেব বাসায় এলে মর্জিনা যেন চোখের সামনে চাঁদ পায়। এখন থেকে
মর্জিনা নিয়ম করে দিয়েছে, দুপুরে ভাইয়া এখানে খাবেন। রেস্টুরেন্টে কি খান আমি দেখেছি, এখানে আমি রান্না করি
আর আপনি ওখানে ওই সব খাবেন, তা হয় না। প্রতি দিন দুপুরে এখানেই খাবেন। এ ভাইয়া যেন তার
কত জনমের কত চেনা রক্তের বন্ধনে বাঁধা আপন
ভাই। ভাইয়া একদিন না এলে কিংবা ফোন না করলে মর্জিনা অস্থির হয়ে যায়। নাদিরও তার
স্ত্রীর কাছে সমস্ত ঘটনা শুনেছে। সেও ভাইয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে।
দেখতে
দেখতে নাদির সুস্থ হয়ে কাজে জয়েন করেছে।
এক্সিডেন্ট হওয়া গাড়িটা আর মেরামত করে ব্যবহার করার উপযুক্ত নেই। সেকেন্ড
হ্যান্ড একটা গাড়ি কিনে নিয়েছে।
১৮৯।
খুকুর
ফিরে আসার সময় হয়েছে। রাশেদ সাহেব ওকে রিসিভ করার জন্য লন্ডন এসছেন। দেশে যাবার সময়
স্টেপনি গ্রিনের কর্ডোভা রোডের বর্ণাদের বাসা ছেড়ে মালামাল যা কিছু ছিল তা তানিমের
বাসায় রেখে গিয়েছিল। খুকু ফিরে আসার আগে তানিমের সাথে ওর
বাসায় ঝর্ণা থাকত সে দেশে চলে যাচ্ছে এবং তিথি এসে থাকবে বলে ওর জায়গায় আর কাওকে
নেয়নি। হিথরো
এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে পিকাডেলি লাইন এবং পরে ডিসট্রিক্ট লাইন ধরে স্টেপনি
গ্রিনের গ্লোব রোডে তানিমের বাসায় আসল। মনি তার পছন্দের কিছু খাবার দিয়ে দিয়েছিল
মেয়ের সাথে। মেয়েকে বলে দিয়েছিল তুমি বাবার সামনে বসে এগুলি নিজে হাতে খাইয়ে দিবে।
মেয়ের সাথে অনেক কথা হলো। ঢাকার দিনগুলি কেমন কেটেছে। কোথায় গেছে, কি করেছে, কার কার সাথে দেখা
হয়েছে এমনি নানা কথা।
পরদিন
আবার ব্রীজেন্ড ফিরে এসেছে। খুকুর সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে। বাহাদুরের সাথেও কথা হয়।
বাহাদুর অনেক সহযোগিতা করে। এদিকে মর্জিনা নাদির এসেছে। গফুরভাইও বেশ অনেকদিন দেশে
থেকে ফিরে এসেছে। মাস খানিকের মধ্যে খুকু আবার ম্যাকডোনালে একটা কাজ পেয়েছে। এক
মাস মায়ের কাছে থেকে এলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। ডাক্তার বলেছে অনেকদিন সময়
লাগবে। তোমাকে আপনজনদের সাথে থাকতে হবে এটাই সব চেয়ে ভাল চিকিৎসা। কিন্তু এ দেশে
আপন জন কোথায় পাবে? ফিরোজ
চাচা এবং বাবা অনেক চেষ্টা করেছে বাবার জন্য লন্ডনে কোথাও কাজ পায় কি না কিন্তু
কোন সুবিধা হয়নি। তবে একদিন রাসেল ফোন করে জানাল নিউ ক্যাসেলে তার এক কাজিন মিজান
সিকিউরিটির কাজের জন্য লোকের যোগান দেয়, মুল কোম্পানির মালিক জন বিউ, সে শুধু লোকের যোগান দেয়।
আপনি কি
এখানে কাজ করবেন? যদি
করেন তাহলে আমি ভাইকে বলে দেখতে পারি। বেতন এখানে যা পাচ্ছেন তার চেয়ে অনেক বেশি
হবে তবে নিজে রান্না করে খেতে হবে এবং কোন নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে পারবেন না।
কোম্পানির যখন যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে যেতে হবে, পারবেন?
হ্যাঁ
বেতন যদি বেশি হয় তাহলে পারব না কেন?
তুমি
মিজানের সাথে আলাপ করে দেখ।
একটু
পরেই রাশেদ সাহেবের ফোন বেজে উঠল।
-হ্যালো
-হ্যালো
চাচা আমি মিজান বলছি।
-ও
হ্যাঁ! মিজান বল কি ব্যাপার।
রাসেলের
রেফারেন্স দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-আপনি
কি এখানে আমাদের সাথে কাজ করবেন?
-হ্যাঁ
বাবা দেখ যদি তেমন সুবিধা জনক কিছু হয় তাহলে করতে পারি।
-হবে, আমার এখানেকয়েকজন বিশ্বস্ত লোকের দরকার, আমি আপনার মত
নির্ঝঞ্ঝাট লোক খুঁজছি। আপনার কি গাড়ি আছে?
-না
চাচা আমার গাড়ি নেই।
-গাড়ি
থাকলে ভাল হয়,
যখন
যেখানে প্রয়োজন সেখানে যেতে পারে না হলে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করতে হয়, আচ্ছা চাচা আপনি কি
এখানে আসতে পারবেন?
-এখানে
মানে কি নিউ ক্যাসেলে?
-হ্যাঁ
হ্যাঁ, আপাতত নিউ ক্যাসেলেই
চলে আসেন পরে আমি দেখব আপনাকে কোথায় দেয়া যায়।
একটু
ভেবে বললো,
-আমি
একটু ভেবে দেখি?
-হ্যাঁ
হ্যাঁ অবশ্যই ভেবে দেখবেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে জানাবেন।
-আচ্ছা, দুই এক দিনের মধ্যেই
জানাব।
১৯০।
সাথে
সাথে খুকুর সাথে আলাপ করল। খুকু বললো,-তোমার জন্য ব্রীজেন্ড
বা নিউ ক্যাসেল একই কথা যদি বেতন বেশি হয় তাহলে চলে যাওয়াই ভাল তবে ফিরোজ চাচার
সাথে একটু আলাপ করে নিও।
-হ্যাঁ, ফিরোজের সাথে অবশ্যই
আলাপ করব।
ফিরোজের
সাথে আলাপ হলো। মানির সাথেও আলাপ হলো। মর্জিনা
এসেছে জেনে মনি এবং খুকু কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিল অন্তত সে এখন একা নয়। মেয়ে অনেক
দূরে থাকে। কাছেই একজন আপন মানুষ পেয়েছে যে কি না নিজের বোনের মতই দেখাশুনা করছে।
-ওকে
ছেড়ে আবার কোথায় যাবে? এখানে
ভালই আছ!
-হ্যাঁ
ভাল আছি কিন্তু এখানে বেতন অনেক কম দিচ্ছে, অবশ্য এটাই এই সব কাজের উপযুক্ত
বেতন কিন্তু আমার এখন বেশি বেতনের দরকার কাজেই আমার মনে হয় চলে যাওয়াই ভাল।
-না
তুমি এখানেই থাক।
মর্জিনা
এবং নাদিরের সাথে আলাপ করল মর্জিনাও মনির মত একই কথা বললো। ভাইয়া
আপনি এখানেই থাকেন। এখনও আনটিকে দেখতে পারলাম না।
আনটিকে
দেখনি তাতে কি হয়েছে, ও
তোমাদের এখানে আসবে কিংবা তোমরা লন্ডন গেলে ওর বাসায় থাকবে তখন কত দেখা হবে। তবে
ফিরোজ এবং বাহাদুরবললো যেখানে ভাল বেতন পাবেন সেখানেই চলে যাওয়া ভাল, এ দেশে আরামে থাকার
জন্য আসেননি,
কষ্ট
করতেই এসেছেন।
মনি তার
সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কিন্তু রাশেদ সাহেব অনেক ভেবে চিনতে দুই দিন পরে মিজানকে
জানিয়ে দিলেন যে আমি আসছি। এদিকে রেস্টুরেন্টে নোটিশ দেয়া হয়েছে। সমসু
ভাই, আসিয়াদ ভাই এরা অবাক
হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-কেন
ভাই কি হয়েছে?
হঠাৎ করে
আপনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? কোন অসুবিধা হচ্ছে? আপনি আছেন বলে আমরা কত
নিশ্চিন্তায় থাকি, কেন
যাবেন?
রাশেদ
সাহেব মনে মনে ভাবলেন এমন হবে সে আমি জানি কিন্তু এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যেতেই
হবে কিন্তু বেতনের কথা কিছুতেই বলা যাবে না। ভিন্ন কোন অজুহাত দেখাতে হবে। কি
বলা যায়?
হঠাৎ
করেই মেয়ের কথা মনে হলো, বললেন-
-আসলে
ভাই মেয়ে একা থাকতে পারছে না তাই ওর কাছাকাছি থাকার জন্য লন্ডনে একটা কাজ পেয়েছি
ওখানে যাব।
-ও!
অনেক
কথা হলো। ওরা কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না। শেষ পর্যন্ত নিতান্ত বাধ্য হয়েই সম্মতি
জানাল। তবে আবার কখনও এদিকে আসলে আমাদের এখানে আপনার জন্য সবসময় খোলা থাকবে। আপনার
যখন প্রয়োজন হয় চলে আসবেন।
[চলবে]
No comments:
Post a Comment
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার মতামত জানতে আগ্রহি।
আশা করি অতি শিঘ্রই আপনার মন্তব্য বা জিজ্ঞাসার জবাব পাবেন।